রাস: রাধাবাজারে সাজানো হচ্ছে প্রতিমাকে। ডান দিকে, পোড়ামাতলার মহিষমর্দিনী। বুধবার নবদ্বীপে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
দুর্গা, কালী, জগদ্ধাত্রী এমনকি ছট পুজোতেও রাত্রিকালীন কার্ফু শিথিল করার নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্ত নবদ্বীপ কেন্দ্রীয় রাস উৎসব কমিটির তরফে রাসের দু’দিন নৈশ কার্ফু শিথিল করার আবেদন করা হলেও বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নবান্নে থেকে কোনও নির্দেশ আসেনি। এ দিনই শুরু হয়েছে নবদ্বীপের রাস। প্রথামাফিক বৃহস্পতিবার রাতে বহু প্রাচীন শক্তিমূর্তির পুজো হওয়ার কথা। কিন্তু নৈশ কার্ফু জারি থাকায় রাত ১১টার পর পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে ধন্দ কাটল না।
এমনিতে এ বারও কোভিডের কারণে বন্ধ ছিল আড়ং এবং নবমীর শোভাযাত্রা। কার্নিভালও গত বছর থেকে স্থগিত রাখা হয়েছে। প্রশাসনিক ভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে বাজনার উপরেও। কিন্তু বাকি সব মানলেও রাসের অন্যতম প্রাণ বাজনার ব্যাপারে আপসে নাজার অধিকাংশ বারোয়ারি। তাদের দাবি, কালী এবং জগদ্ধাত্রী পুজোয় জেলার অন্যত্র যা হয়েছে তার পর এ সব নিষেধাজ্ঞা অর্থহীন।
শহরের প্রাণকেন্দ্র পোড়ামাতলায় মহিষমর্দিনী পুজো দিয়ে এ দিন নবদ্বীপের রাস উৎসবের সূচনা হয়। মঙ্গলবার অবশ্য বড়ালঘাটে পবিত্রময় সেনগুপ্ত রোডে ধামেশ্বর মহাপ্রভু মূর্তির আবরণ উন্মোচন করে রাসের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা।
রাস মূলত বৈষ্ণবীয় উৎসব হলেও নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের প্রভাবে প্রায় পৌনে তিনশো বছর আগে নবদ্বীপে শুরু হয়েছিল শক্তিমূর্তি গড়ে সাড়ম্বর পুজো। পরবর্তী কালে রাসে বৈষ্ণব-শাক্ত-শৈব এই তিন ধারার ব্যতিক্রমী মিলন ঘটে। কম-বেশি চারশো বিভিন্ন দেবদেবীর আকাশছোঁয়া মূর্তি গড়ে পুজো নবদ্বীপের রাসের বিশেষত্ব।
যদিও গত বছর থেকে অতিমারির কারণে অনেকটাই ম্লান উৎসবের জৌলুস। এই বছর শুরু থেকেই নানা বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। রাসের উদ্যোক্তারা তার বেশির ভাগই মেনে নিয়েছেন। তাঁদের দাবি, শুধু বাজনার অনুমতি দিতে হবে। কেননা ব্যাঞ্জো-ক্যাসিয়ো- সহযোগে তাসা নবদ্বীপের রাসের অন্যতম অঙ্গ। নবদ্বীপ কেন্দ্রীয় রাস উৎসব কমিটি এবং পুর প্রশাসকের তরফে তার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল প্রশাসনের কাছে। তার জবাবে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার জানান, আদালতের নির্দেশের বাইরে তাঁরা যেতে পারবেন না। এর পর রাস কমিটির তরফে নৈশ কার্ফু শিথিল করার আবেদন জানানো হয়। তাতেও সাড়া মেলেনি। নবদ্বীপ কেন্দ্রীয় রাস উৎসব কমিটির তরফে দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রথম থেকেই প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে রাস উদ্যাপন করতে চেয়েছি আমরা। আমরা বলেছিলাম, প্রতি বারোয়ারি একটি ঘেরা জায়গার মধ্যে বাজনা বাজাবে। কিন্তু আদালত দেখাল প্রশাসন।” তাঁর অভিযোগ, “আদালতে নির্দেশের তোয়াক্কা না করে কৃষ্ণনগরে লাখো মানুষের ভিড়ে সাঙে জগদ্ধাত্রীর বিসর্জন হল। ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে রইল প্রশাসন। অথচ নবদ্বীপের রাসে বাজনা হবে না?” বহু বারোয়ারি কার্যত বাজনার প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছে।
পুলিশ এ ক্ষেত্রে কী করবে?
নবদ্বীপ থানার আইসি দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আদালতের নির্দেশ অনুযায়ীই আমরা রাস নিয়ন্ত্রণ করব। কেউ নির্দেশ অমান্য করলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।”