TMC foundation day

খেলা ঘোরাতে প্রতিষ্ঠা দিবসে ময়দানে তৃণমূল

রানাঘাটের তৃণমূল নেতা দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচি একেবারে নিচুতলা পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:২২
Share:

প্রতীকী ছবি।

একের পর এক দুর্নীতি মামলার ঢেউ। টেট থেকে এসএসসি। এজেন্সির তদন্ত। আবাস যোজনার তালিকায় প্রায় সর্বত্র শাসক-ঘনিষ্ঠ অযোগ্যদের নাম ঢোকানো নিয়ে ক্ষোভ। সেই সঙ্গে লাগাতার গোষ্ঠীবাজি।

Advertisement

পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এত ধাক্কা সামলে দলের নিচুতলাকে চাঙ্গা করতে সাড়ম্বরে দলের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের রাস্তা নিল তৃণমূল। রবিবার, পয়লা জানুয়ারি সেই উদ্‌যাপন নিয়ে জেলার উত্তর থেকে দক্ষিণে সভা-সমাবেশ থেকে ভূরিভ‌োজের যে বিপুল আয়োজন চোখে পড়ল, তা ইদানীং কালে কখনও দেখা গিয়েছে বলে কেউই মনে করতে পারছে না। অন্য প্রায় সব কর্মসূচির মতো এ দিন কিন্তু দলীয় কোন্দলের ঘটনা সে ভাবে সামনে আসেনি।

তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এ দিন এলাহি আয়োজন করে কল্যাণী শহর তৃণমূল। সেন্ট্রাল পার্কের মাঠে সকাল থেকে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কর্মী-সমর্থকদের পাতে পড়েছে ভাত, ডাল, বাঁধাকপির তরকারি, মুরগির মাংস আর মিষ্টি। যাঁরা মাংস খান না, তাঁদের জন্য মাছের ব্যবস্থা। তৃণমূলের দাবি, এ দিন প্রায় ২৭ হাজার মানুষকে খাওয়ানো হয়েছে। মাঠে টেবিলে বসে এবং বুফে সিস্টেমে খাওয়ার ব্যবস্থা করা ছিল। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাওয়া দাওয়া চলে। কল্যাণী শহর তৃণমূলের তরফে তিনটি দলীয় গানও প্রকাশ করা হয়। রাজ্য আইএনটিটিইউসি সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই মহাভোজের জন্য প্রায় পাঁচ হাজার কেজি মুরগির মাংস এসেছে। বাজেট ছিল প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। এত টাকা এল কোথা থেকে? কল্যাণী শহর তৃণমূলের সভাপতি বিপ্লব দে বলেন, “আমাদের ২৫ হাজার কর্মী-সমর্থক ১০০ টাকা করে দিয়ে কুপন নিয়েছেন। যাঁরা তা দিতে পারেননি, তাঁদের কুপনের টাকা অন্য নেতা বা কর্মীরা দিয়ে দিয়েছেন।” যদিও মাঠে অনেকের কাছ থেকেই জানা গিয়েছে, বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাদের কাছে কুপন বিনা পয়সাতেই দেওয়া হয়েছে। যাঁরা কুপন দিয়ে খেয়েছেন, তাঁদেরও অনেকেরই দাবি, কুপন বিনামূল্যেই পেয়েছেন। তবে আদৌ ওই মাঠে অত লোককে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা সম্ভব কি না তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন।

এতটা না হলেও বিজেপি প্রভাবিত দক্ষিণ নদিয়ায় রানাঘাট থেকে শান্তিপুর প্রায় সর্বত্রই তৃণমূলের এই মেজাজ চোখে পড়েছে। প্রায় সর্বত্র মাইকে বার বার বেজেছে ‘খেলা হবে’ গান। তা আসলে খেলা ঘোরানোরই চেষ্টা বলে বিরোধীদের দাবি। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠক এবং তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা অভিযেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা রানাঘাটে হওয়ায় যে ঈঙ্গিত মিলেছিল।

এ দিন শান্তিপুর শহরে লাড্ডু বিতরণ থেকে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, বহু কিছুই ছিল অনুষ্ঠানের অঙ্গ। বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামী, পুরপ্রধান সুব্রত ঘোষেরা উপস্থিত ছিলেন। চাকদহে চান্দুরিয়ায় বড়সড় মিছিল করা হয়।

উত্তরে করিমপুর ১ ব্লকের জামতলা মোড়ে দফতরের সামনে দলের পুরনো কর্মীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। নানা জায়গায় অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায়। তৃণমূল সূত্রের দাবি, নেতৃত্বের তরফে শহরের সঙ্গে গ্রামাঞ্চলেও একেবারে নিচুস্তরে এই কর্মসূচি পালনের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল।

রানাঘাটের তৃণমূল নেতা দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচি একেবারে নিচুতলা পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে জনসংযোগের পাশাপাশি সংগঠনের বার্তাও আমরা পৌঁছে দিয়েছি।” তবে প্রাক্তন তৃণমূল নেতা, বর্তমানে বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “নিয়োগ থেকে শুরু করে আবাস, সব কিছুতেই দুর্নীতি দেখে মানুষ ওদেকর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। এখন আর এ সব করে কোনও লাভ হবে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement