শিব-সকালে: হর-পার্বতীর চা পান। (ডান দিকে) শুরু হল ডিজের দাপট। শুক্রবার। ছবি: ইন্দ্রাশিস বাগচী ও গৌতম প্রামাণিক।
মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন শিবরাত্রি উপলক্ষে সারা দিন বহরমপুরের গোরাবাজার থেকে কাশিমবাজার পর্যন্ত বাজল মাইক চলল ডিজে। প্রশাসন থাকল ছুটির মেজাজে।
গতকাল হরিহরপাড়া হাজি একে খান কলেজে নবীনবরণ উপলক্ষে মাইক বাজানোকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। যদিও পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভুল স্বীকার করে নেন। মাস খানেক আগে কৃষ্ণনাথ কলেজে স্নাতক পরীক্ষা চলাকালীনই ছাত্র যুব উৎসবে মাইক বাজানোকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল বিতর্ক। আর এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার মধ্যেই বহরমপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডিজে বাজিয়ে, ব্যান্ড বাজিয়ে চলল শিবরাত্রির উদ্যাপন।
চলতি মাসের ১৮ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার ভূগোল পরীক্ষার পর গতকাল শিবরাত্রি উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকায় পরীক্ষা ছিল না। আজ, শনিবার মাধ্যমিকের ইতিহাস পরীক্ষা। সোমবার অঙ্ক পরীক্ষা। স্বাভাবিক ভাবেই শুক্রবার ছাত্রছাত্রীরা সারা দিন দরে ঝালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন বাকি পরীক্ষার বিষয়গুলো। কিন্তু যেন মোটামুটি শহর জুড়েই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বক্স বাজিয়ে চলল গান। তার সঙ্গে নাচ।
অনেক পরীক্ষার্থী ঘরের দরজা জানলা বন্ধ করে আপ্রাণ চেষ্টায় পড়াশোনায় মন দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর ঘরে বসে হাত কামড়ালেন অভিভাবকরা। এক অভিভাবক অন্তিম সাঁতরা বলছেন, “কী করব বলুন। আমরা বন্ধ করতে বললেও ওরা শুনবে না।” খাগড়ার বাসিন্দা অমিত কর বলেন, “উৎসবের নাম করে শব্দের হুজ্জতি কেন।” কয়েক ক্ষেত্রে শব্দদূষণের অভিযোগ পুলিশের কাছে পৌঁচেছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার অজিত সিং যাদব বলেন, “মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা না করে শব্দদূষণ করার অভিযোগ যেখানে যেখানে পাওয়া গিয়েছে সেখানে গিয়ে পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে।” কিন্তু সব অভিভাবক পুলিশকে জানাতে পারেননি। যদিও সন্ধ্যা থেকে বহরমপুর থানার পুলিশের তিন চারটে টহলদারি ভ্যান শহরের রাস্তায় নেমেছে। বেশ কিছু পুজো মন্ডপের মাইক বন্ধ করা হয়েছে বলে বহরমপুর থানা সূত্রে জানা গিয়েছে।
বহরমপুরে শিবরাত্রি উপলক্ষে বেশ কিছু স্থায়ী মন্দিরে তো বটেই প্যান্ডেল টানিয়ে পুজোর আয়োজন করেছেন বাসিন্দা। এই পুজো একরাত্রির। তাই পাড়ায় পাড়ায় এই পুজোর আয়োজন করতে খরচ কম হয়। তাতেই পাড়ায় পাড়ায় এই পুজোর চল বহু দিনের। গোরাবাজার কলেজ ঘাট থেকে শুরু করে গাঁধী কলোনি, কান্দি বাসস্ট্যান্ড থেকে কাজি নজরুল সরণির বিভিন্ন জায়গায় সাউন্ড বক্সের আওয়াজে অতিষ্ঠ হলেন বাসিন্দারাও।
কিন্তু পুজোকে কেন্দ্র করে এত শব্দের হুল্লোড় কেন? ভাগীরথীর পূর্বপাড়ের নতুন বাজার সংলগ্ন একটি পুজো কমিটির উদ্যোক্তা অমর দাস বলেন, “বছরে একদিন এই পুজো হয়। একরা তের ব্যাপার। তাই ছেলেরা একটু আনন্দ করবে বলে সাউন্ড বক্স ভাড়া করেছি।” অন্য এক পুজো কমিটির উদ্যোক্তা সুভাষ হাজরা বলেন “আমরা আস্তেই বক্স বাজিয়েছি।” শহরের এক সাউন্ড বক্স ব্যবসায়ী শুভেন্দু চক্রবর্তী বলেন, “সাউন্ড বক্স যারা এই সময় ভাড়া দেন তাদের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রাখা উচিত। আমরা এইসময় ভাড়া দিই না।” এক ডিজে শিল্পী অমৃত কর্মকার বলেন, “ডিজে আর সাউন্ড বক্স সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। সাধারণ মানুষ সাউণ্ড বক্সের সঙ্গে ডিজেকে গুলিয়ে ফেলেন।” গোরাবাজার ইশ্বর চন্দ্র ইন্সটিটিউশনের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত চৌধুরী বলেন, “সকলকে সতর্কও করা হয়। তবু যারা পরীক্ষার সময় বক্স বাজায়, তারা বিবেকহীন।’’