অপেক্ষা। নিজস্ব চিত্র
কাঠফাটা রোদ। বহরমপুর বাসস্ট্যান্ডে কলকাতাগামী বাসের জন্য ক্যানসার আক্রান্ত বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন বহরমপুরের মণীন্দ্রনগরের সর্বাণী ঘোষ। রোদে পুড়ে দরদর করে ঘেমে চলেছেন বাবা-মেয়ে। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর কলকাতাগামী একটি বাস আসতেই দু’জনে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। অসুস্থ বাবা করোনা ভুলে গাদাগাদি করে উঠলেন সেই বাসে। তার পর বাবাকে বসিয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সর্বাণী বললে, ‘‘কলকাতায় এন আর এস হাসপাতালে মাসে দু’বার করে কেমো দেওয়ার জন্য বাবাকে নিয়ে যেতে হয়। লকডাউন পর্ব চলাকালীন যেতে পারিনি। তাই বাস চলাচলের খবর পেয়ে এ দিন অপেক্ষায় ছিলাম। জানি না এ অবস্থা কত দিন চলবে!’’
বেলডাঙার সুরজ শেখ শিয়ালদহে একটি বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দোকানে কাজ করেন। লকডাউনের শুরুতে বাড়িতে ফেরার পর আর কর্মস্থলে যেতে পারেননি তিনি। বাস চলাচল শুরু হলেও কলকাতাগামী বাসে বেলডাঙা থেকে জায়গা না পাওয়ায় তিনি বাসে উঠতে পারছিলেন না। তাই বুধবার বেলডাঙা থেকে একটি বেসরকারি বাসে বহরমপুর, তার পর অপেক্ষা কলকাতার বাসের জন্য। সুরজ বলছেন, ‘‘ট্রেন চলাচল বন্ধ। বেলডাঙা থেকে বাসে ওঠার সুযোগ পাচ্ছিলাম না বলে বহরমপুরে এলাম। জীবনটা যেন থমকে গিয়েছে। করোনা কিংবা যে রোগই হোক আমায় কলকাতায় যেতেই হবে।’’
দিন পনেরো আগে জেলায় অতিরিক্ত বাস নামিয়েছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা। এক সপ্তাহ ধরে বেসরকারি বাসও রাস্তায় নেমেছে। বাসের সংখ্যা আগের তুলনায় বাড়লেও সব বেসরকারি বাস এ দিনও রাস্তায় নামেনি। ফলে এদিনও যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হল। অনেকেই বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থেকে সকাল থেকে বিকেল দেখে ফেললেন। কেউ ধরলেন ছোট গাড়ি। নির্দেশিকা মানারও সুযোগ ছিল কম। মাস্ক ছাড়াই হুড়মুড়িয়ে বাসে উঠেছেন যাত্রীরা, এ ছবি সারা দিনে অহরহ ধরা পড়ল।
মুর্শিদাবাদ বাস ওনার্স কাউন্সিলের সম্পাদক তপন অধিকারী বলেন, ‘‘যাত্রীর অভাবে প্রতি দিন আমাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। এ ভাবে চললে বাস চালানো বন্ধ করে দিতে হবে।’’ তাঁর দাবি, কলকাতায় যাত্রী বেশি, বাস কম। ঠিক তার উল্টো চিত্র মুর্শিদাবাদে। এখানে যাত্রী কম, কিন্তু বাস বেশি চলছে। মুর্শিদাবাদের বাস মালিকরা জানিয়েছেন, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় কলকাতা, লালগোলা ও জঙ্গিপুর রুটের বাসগুলিতে যাত্রী বেশি হচ্ছে। বহরমপুর থেকে কলকাতাগামী বাস পর্যাপ্ত চলাচল করছে। কিন্তু হাওড়া বা কলকাতা থেকে যে সব বাস বহরমপুরে এসে আবার কলকাতা ফিরত, সেগুলি জেলায় আসছে না। এর ফলে কলকাতাগামী বাসও সংখ্যায় অনেক কম।
মুর্শিদাবাদ জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামল সাহার দাবি, ‘‘এ দিন জেলায় ৮০ শতাংশ বাস নেমেছে। তবে যাত্রী খুবই কম ছিল রাস্তায়। এই পরিস্থিতিতে গণপরিবহণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে হচ্ছে ঠিকই তবে মালিকদের ক্ষতি হচ্ছে প্রচুর। কাল (বৃহস্পতিবার) এ নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। দেখা যাক কী হয়।’’