—নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা হাই কোর্টের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতির নির্দেশ সংক্রান্ত ভুয়ো জামিনের নথি নিম্ন আদালতে দেখিয়ে জামিন পেয়েছিলেন খুনের আসামি। এই কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সিআইডির হাতে গ্রেফতার হলেন কলকাতা হাই কোর্টের এক আইনজীবী। এই ঘটনায় আগেই গ্রেফতার হয়েছেন জামিনপ্রাপ্ত ওই খুনের আসামির ছেলে।
সিআইডি সূত্রে খবর, উচ্চ আদালতের ধৃত আইনজীবীর নাম অরিন্দম রায়। মঙ্গলবার তাঁকে কাটোয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৫, ৪৬৭, ৪৬৬, ৪৬৮, ৪৬৯, ৪৭১, ৪৭২, ৪৭৩, ৪৭৪, ১২০(বি) ধারায় মামলা রুজু হয়েছে অরিন্দমের বিরুদ্ধে। তাঁর ১৪ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমা আদালতের বিচারক সৈকত সরকার। অরিন্দমের অবশ্য দাবি, তিনি কোনও অনৈতিক কাজ করেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আইনের বাইরে কোনও কাজ করিনি। আইনজীবীর এথিক্স (নৈতিকতা) বিসর্জন দিইনি। বাকিটা আদালতে জানাব।’’
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল ভরতপুর থানার হরিশ্চন্দ্রপুরে আশরফ শেখ নামে এক যুবককে বোমা মেরে খুনের অভিযোগ উঠেছিল লালু শেখের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছিলেন লালু। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি কান্দির এক আদালত লালুকে যাবজ্জীবন কারাবাস ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছ’মাস কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়। সাজা ঘোষণার দু’বছর পর লালু ২০২১ সালের ৬ মার্চ কান্দি আদালতে নথি পেশ করেন। তাতে তাঁর দাবি, আবেদনের প্রেক্ষিতে হাই কোর্ট তাঁকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে। কান্দি আদালত লালুর জামিন মঞ্জুর করে ওই নথির ভিত্তিতে। অভিযোগ উঠেছে, সেই নথিটি জাল ছিল। এমন কোনও নির্দেশই হাই কোর্ট দেয়নি। কিন্তু সম্প্রতি কান্দি আদালতে সরকারপক্ষের আইনজীবী সুনীল চক্রবর্তী জামিনের নথি খতিয়ে দেখার সময় বিষয়টি নজরে আসে। আদালতের নথি জাল করার অভিযোগ ওঠার পরেই সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। এর পরে লালুর ছেলে লাবু শেখকে গ্রেফতার করে সিআইডি। এ বার গ্রেফতার হলেন হাই কোর্টের এক আইনজীবীও। সিআইডির দাবি, বাবার জামিনের জন্য অরিন্দমের দ্বারস্থ হয়েছিলেন লাবু।
সিআইডির ভারপ্রাপ্ত তদন্তকারী আধিকারিক শিমূল সরকার বলেন, ‘‘অভিযুক্ত কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতির নথি জাল করে তার মক্কেলের জামিনের ব্যবস্থা করেছে। এই অভিযোগে তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।’’