Jagaddhatri Puja

ব্যর্থ পরিকল্পনা, বৃহস্পতিবার দুপুরে হল বুড়িমার নিরঞ্জন, আবেগের কাছে নত প্রশাসন

প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলছেন সাধারণ মানুষ থেকে পুজো উদ্যোক্তারা। প্রশাসন বলছে, মানুষের আবেগের কারণেই কঠোর পদক্ষেপ করা যায়নি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:৪১
Share:

নিরঞ্জনের পথে বুড়িমা। — নিজস্ব চিত্র।

পরিকল্পনা ছিল মাঝরাতেই নিরঞ্জন করা হবে কৃষ্ণনগরের বুড়িমাকে। সেই মতো নিরঞ্জনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল ‘গ্রিন করিডোর’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হল। আগের কয়েক বছরের মতো সকাল গড়িয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে হল বুড়িমার নিরঞ্জন। প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলছেন সাধারণ মানুষ থেকে পুজো উদ্যোক্তারা। প্রশাসন বলছে, মানুষের আবেগের কারণেই কঠোর পদক্ষেপ করা যায়নি।

Advertisement

ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সকাল ৭টা ৫৮। মন্দির ছেড়ে কৃষ্ণনগর রাজপথে পা রাখলেন চাষাপাড়ার বুড়িমা। যদিও পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। ঠিক ছিল, নিরঞ্জনের জন্য প্রথম বার ‘গ্রিন করিডোর’ করে রাত ঠিক ২টোর সময় চাষাপাড়া থেকে রাজপথ হয়ে রাজবাড়ির নহবতখানা ছুঁয়ে রাত্রি আড়াইটের সময় নিরঞ্জনের জন্য কদমতলা ঘাটে পৌঁছবে বুড়িমা। বুড়িমার আগেই ভাসান সম্পন্ন হবে চকের পাড়ার আদি মা, বাগাডাঙ্গার বাগা মা ও কাঁঠালপোতার ছোট মার। জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে পুজো উদ্যোক্তাদের নিয়ে আয়োজিত সভায় এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জেলা পুলিশ প্রশাসন। পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে গত কয়েক বছরের মতোই বুড়িমার নিরঞ্জন সম্পন্ন হল বৃহস্পতিবার দুপুরে। রাতভর অপেক্ষায় থাকা দর্শনার্থীরা অব্যবস্থার জন্য দায়ী করলেন প্রশাসনকে। পুজো উদ্যোক্তাদের দাবি, তাঁদের দিক থেকে চেষ্টার কোনও ত্রুটি ছিল না। প্রশাসন বলছে, আবেগের কাছে খানিকটা আপস করতে হয়েছে প্রশাসনকে। তবে সব কিছু শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে প্রশাসন। এ বারও সঠিক সময়ে প্রতিমা নিরঞ্জন সম্পন্ন করতে না পারায় ক্ষুব্ধ কৃষ্ণনাগরিকেরা।

কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পূজার রীতি মেনে প্রতিমার আগে পুজো কমিটিগুলি ঘট নিরঞ্জনের জন্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে। বিভিন্ন ট্যাবলো সহযোগে কৃষ্ণনগরের রাজপথ প্রদিক্ষণ করে কদমতলা ঘাটে নিরঞ্জন করা হয় মঙ্গলঘট। সেই কাজ শেষ হলে কাঁধে করে নিরঞ্জন করা হয় প্রতিমা। বুধবার বিকেল ৩টের মধ্যে ঘট নিরঞ্জন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা ছিল প্রশাসনের। তবে ঘট নিরঞ্জন শেষ হতে বিকেল গড়িয়ে বুধবার সন্ধ্যা হয়ে যায়। প্রশাসন বলছে, বিপুল ভক্ত সমাগমের কারণেই হয়েছে এ রকম। সাধারণত পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে ৫০ থেকে ১০০ জনের শোভাযাত্রা থাকলেও এ বছর বেশ কয়েকটি পুজোয় সংখ্যাটা হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। ফলে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে কৃষ্ণনগরের প্রধান পথ।

Advertisement

প্রশাসন জানিয়েছে, ১০ থেকে ১২ লক্ষের জমায়েত ছিল বুধবারের প্রতিমা নিরঞ্জনে। অতিরিক্ত জনসমাগমের জন্য এগোয়নি ‘সাঙ’।‌ ঠেলাগাড়ির বদলে কাঁধে করে (যার পোশাকি নাম ‘সাঙ’) কয়েকশো বেহারা ছুটে চলেন প্রতিমা নিয়ে। গোটা যাত্রাপথে বার তিনেক বিশ্রাম নেওয়ার কারণে একটু সময় চলে যায়। চাষাপাড়া বারোয়ারির সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা প্রশাসনকে আগেই বলেছিলাম, যদি আমাদের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, অর্থাৎ রাস্তার ছাড়পত্র দেওয়া হয় তবে আমরা ২টো থেকে আড়াইটের মধ্যে প্রতিমা নিরঞ্জনে প্রস্তুত। তবে কৃষ্ণনগরের বুড়িমা নিয়ে আবেগ আমাদের মাথায় রাখতে হয়েছে।’’ কৃষ্ণনগর চকের পাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা রত্নদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গ্রিন করিডোরের নামে কী সব গল্প ছড়ানো হল। পুলিশ চাইলেই সঠিক সময় করতে পারত।’’ কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সঞ্জয় কুমার মাকওয়ান বলেন, ‘‘প্রথম দিনের নিরঞ্জন প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়েছে। অনেক সময় আবেগী জনস্রোতকে সামাল দিতে বেগ পেতে হয়েছে। আমরা দ্বিতীয় নিরঞ্জনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement