মহালয়ায় মণ্ডপের সামনেই পড়ে দেহ

তখন সবে ভোর হচ্ছে। এ বাড়ি-ও বাড়ি থেকে রেডিওয় ভে‌সে আসছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের গলা। মহালয়ার ভোর। পাড়ার পুজো মণ্ডপে বাঁশ বাঁধা হয়ে গিয়েছে। ভোরের নরম আলোয় সেই মণ্ডপের ঠিক সামনেই পড়ে ছিল রক্তমাখা দেহটা। কৃষ্ণনগরের জোড়াকুঠি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৪১
Share:

তখন সবে ভোর হচ্ছে। এ বাড়ি-ও বাড়ি থেকে রেডিওয় ভে‌সে আসছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের গলা। মহালয়ার ভোর।

Advertisement

পাড়ার পুজো মণ্ডপে বাঁশ বাঁধা হয়ে গিয়েছে। ভোরের নরম আলোয় সেই মণ্ডপের ঠিক সামনেই পড়ে ছিল রক্তমাখা দেহটা। কৃষ্ণনগরের জোড়াকুঠি।

আলো ফুটতে সবে টুকটাক লোক বেরোতে শুরু করেছে তখন। কেউ যাবেন মহালয়ার তর্পণ করতে, কেউ স্রেফ সকালে হাঁটার অভ্যেসে। চোখে পড়েছিল এক মহিলার— মণ্ডপের সামনে পড়ে পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক বাবু মাহাতোর (৩৫) দেহ।

Advertisement

কিছু ক্ষণের মধ্যে ভিড় জমে যায়। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা থেকে পুলিশ আসে। তারাই মৃতদেহটি তুলে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। এরই মধ্যে পরিবারের তরফে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। এলাকাছাড়া হয়ে যায় পুজো কমিটির লোকজন। পুলিশ কয়েক জনকে আটক করে জেরা শুরু করে। শেষমেশ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়, যাদের এক জন সাহেব হালদার নামে এক দাগি দুষ্কৃতী। কিছু দিন আগেই জেল খেটে বেরিয়েছে।

পাড়া ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাবুই ছিলেন পুজোর অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা। ফি বছরের মতো এ বারও মহালয়ার আগের রাতে মণ্ডপে পান-ভোজনের আয়োজন হয়েছিল। বক্সে গান বাজিয়ে সঙ্গে নাচানাচিও হচ্ছিল। এরই মধ্যে বেদি পুজো সেরে ফেলা হয়। অনেকেই রাতে বাড়ি ফিরে যান।

বাবুর বাড়ির লোকেরা জানান, রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তিনি বাড়ি ফিরে হাতমুখ ধুয়ে পোশাক পাল্টে নিয়েছিলেন। সেই সময় পাড়ার একটি ছেলে এসে তাঁকে ফের ডেকে নিয়ে যায়। তার পরে আর তিনি ফেরেননি। বাবু বিয়ে করেননি। রাতভর আড্ডা বা পাড়ার পুজোর কাজ আগেও তিনি করেছেন। ফলে বাড়িতে কেউ দুশ্চিন্তা করেনি। ভোরে দুঃসংবাদ আসে।

কেন খুন হলেন বাবু?

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জেনেছে, দ্বিতীয় বার বাড়ি থেকে বের হয়ে আবার মদের আসর বসেছিলেন বাবু। সেখানেই তর্কবিতর্ক বাধে এবং কয়েক জন বাবুকে কুপিয়ে খুন করে পালায়। বাবুর বাবা মদন মাহাতো দাবি করেন, “মদ খাওয়া হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আমার ছেলে এমন মদ খায়নি যে গণ্ডগোল পাকাবে।”

এই ঘটনায় এক লহমায় পাল্টে গিয়েছে এলাকার পরিবেশ। সারা দিন কোনও দোকানপাট খোলেনি। পাড়ার অনেকেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। পুজোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মহালয়াতেই হয়ে গেল বিসর্জন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement