চালাও ঠান্ডা, ঢালাও রক্তদান

মুখ্যমন্ত্রী বলে গিয়েছিলেন, ‘ঠান্ডা জায়গা’য় রক্তদান শিবির করতে হবে পুলিশকে। দিনে সম্ভব না হলে করতে হবে রাতে। কিন্তু ‘ঠান্ডা জায়গা’ বলতে ঠিক কী বুঝিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? ছায়া সুনিবিড় কুঞ্জবন না কি এসি-শীতল লাক্সারি ঘর? মহা ফাঁপরে পড়ে গিয়েছে নদিয়া পুলিশ।

Advertisement

সুস্মিত হালদার ও শুভাশিস সৈয়দ

কৃষ্ণনগর ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৭ ১৩:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

মুখ্যমন্ত্রী বলে গিয়েছিলেন, ‘ঠান্ডা জায়গা’য় রক্তদান শিবির করতে হবে পুলিশকে। দিনে সম্ভব না হলে করতে হবে রাতে।

Advertisement

কিন্তু ‘ঠান্ডা জায়গা’ বলতে ঠিক কী বুঝিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? ছায়া সুনিবিড় কুঞ্জবন না কি এসি-শীতল লাক্সারি ঘর? মহা ফাঁপরে পড়ে গিয়েছে নদিয়া পুলিশ।

বিকেল থেকে বইতে থাকা দখিন হাওয়া কি যথেষ্ট ‘ঠান্ডা’? তাতে কি রক্ত-গরম দাতাদের শরীর জুড়োবে? ঠিকঠাক পালিত হবে নির্দেশ? নাকি শীতাতপ যন্ত্রের ফিনফিনে শীতলতা ছাড়া ‘ঠান্ডা’ প্রমাণ হবে না?

Advertisement

পান থেকে চুন যাতে কিছুতেই না খসতে পারে, তার জন্য কাজের ফাঁকে ফোন ঘোরাচ্ছেন বিভিন্ন থানার ওসি — অমুক দিন গোটা তিনেক এসি মিলবে? নিদেন পক্ষে এয়ারকুলার?

আপাতত ঠিক হয়েছে, ২০ থেকে ২৩ মে যথাক্রমে কৃষ্ণনগর, তেহট্ট, রানাঘাট ও কল্যাণী মহকুমায় শিবির হবে। কিন্তু কোথায় কী ভাবে করা হবে সেই ব্যবস্থা এখনও পাকা হয়নি। পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “কী ভাবে শিবির হবে তা আলোচনার মাধ্যমেই ঠিক হবে।” আজ, বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছেন তিন মাথা— জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।

ঘটনা হল, নদিয়ার বেশির ভাগ থানা এলাকাতেই লজ বা কমিউনিটি হল আছে, কিন্তু এসি নেই। এক-আধটা ছোট ঘরে তা থাকলেও তাতে রক্তদান শিবির করা সম্ভব নয়। কিছু এলাকায় আবার কমিউনিটি হলই নেই। কেউ-কেউ ঠিক করেছেন, থানা চত্বরেই মণ্ডপ বেঁধে শিবির হবে। ডেকরেটরদের কাছ থেকে ভাড়া করা পাখা বা পেডেস্টাল ফ্যানই তাদের শেষ সম্বল।

মুর্শিদাবাদের পুলিশ অবশ্য এতটা উতলা নয়। ২০ থেকে ২৬ মে জেলার ২৭টি থানার মধ্যে সাতটিতে শিবির হবে ঠিক হয়েছে। জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক প্রভাসচন্দ্র মৃধা বলেন, ‘‘৩৯৫ প্যাকেট রক্ত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।’’ অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী যে থানা পিছু অন্তত ৫০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করতে বলেছেন, মুর্শিদাবাদের লক্ষ্যমাত্রা তার চেয়ে কিঞ্চিৎ বেশিই। ২০ মে থেকে রোজ যথাক্রমে বেলডাঙা, ইসলামপুর, শক্তিপুর, রেজিনগর এবং ২৪ তারিখ নওদা ও নবগ্রামে শিবির হবে। ২৬ মে হবে দৌলতাবাদে। ২৮ মে তাদের এলাকায় শিবির করার জন্য জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানা।

সে সব জায়গায় ঠান্ডার কী হবে?

কিছু জায়গায় এসি আছে। যেমন, বেলডাঙা থানায় সম্প্রতি তদন্তকারী অফিসারদের বসার ঘরে এসি বসানো হয়েছে। রক্তদানের পরে ওই ঘরেই রক্তদাতারা বিশ্রাম নেবেন বলে
ঠিক হয়েছে। ওই দিনই এসি ঘরটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন জেলার পুলিশ সুপার। শক্তিপুরের ওসি পিন্টু মুখোপাধ্যায় আবার অসহায় ভাবে বলেন, ‘‘এই পিছিয়ে পড়া এলাকায় এসি বা এয়ারকুলার কোথায় পাব!’’ নওদা থানা তো থানায় ম্যারাপ বেঁধে এক ঝাঁক পাখা লাগাবে বলে ঠিক করেই ফেলেছে। ইসলামপুর থানার ওসি বিপ্লব কর্মকার আবার সাবধানী। তাঁর কথায়, ‘‘গরমে রক্তের সঙ্কট মেটাতে শিবির হচ্ছে, এটাই আমাদের কাছে ভাল খবর। পরে ঠিক করব এসি না এয়ারকুলার!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement