প্রতীকী ছবি।
তৃণমূল ভবনই যে শেষ কথা, জেলায়-জেলায় ব্লক সভাপতি মনোনয়নের প্রশ্নে সে কথাই স্পষ্ট করে দিতে চাইছে তৃণমূলের শীর্য নেতৃত্ব। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে দলের নিরবিচ্ছিন্ন স্থানীয় কোঁদল মুছতেই এই সুপারশি ভোটকুশলী পিকে’র, দলের অন্দরে এমনই খবর।
দলের একেবারে নীচুতলার এই পদ নির্বাচন ঘিরে জেলার বাইরে তেমন আগ্রহ কোনও দিন ছিল না। তবে এ বার মুর্শিদাবাদে তা নিয়ে মৃদু উৎসাহ রয়েছে। তার কারণ একটাই, জমানা বদল। কংগ্রেসের খাসতালুক মুর্শিদাবাদকে তৃণমূলের হাতের তেলোর মধ্যে এনে দিলেও এই জেলার দলীয় পর্যবেক্ষকের পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর জায়গায় তৃণমূলের আনাচকানাচে এখন অভিযেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। ফলে ব্লক স্তরেও শুভেন্দু ঘনিষ্ঠদের বিদায় প্রায় নিশ্চিৎ হয়ে গেলেও অভিষেকের নিজস্ব ঘরানার মধ্যে কে পেলেন ঠাঁই— তা দেখার একটা গভীর আগ্রহ শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, রয়েছে অন্যত্রও। জেলার অন্যতম কো-অর্ডিনেটর অশোক দাসের কথাতেও তা কিঞ্চিৎ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে রাজা বদলে গেলে কথার সুরও বদলে ফেলতে হয়— “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব ও তার পর্যবেক্ষণেনতুন ভাবে ব্লক সভাপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে জেলায়।’’
এতদিন জেলা সভাপতিই ঘোষণা করতেন ব্লক কমিটি। এবার জেলা সভাপতি, বিধায়ক, কো-অর্ডিনেটর সকলেই সুপারিশ করছেন তাঁদের অনুগতদের নামের তালিকা। তবে সিদ্ধান্ত আর জেলায় থাকছে না। আসবে খোদ তৃণমূল ভবন থেকে।
তবে, সেই মনোনয়ন যে খুব সুবিধার হবে না তা দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। কারণ, বেশির বাগ ব্লক সভাপতি পদের জন্য গড়ে ৪ থেকে ৫ জনের নাম সুপারিশ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিধানসভা নির্বাচনের আগে গোষ্ঠী কোন্দল বাড়বে না তো, এই সিদ্ধান্ত আবার হিতে বিপরীত হয়ে ফিরে আসবে না তো, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
গত দশ দিনে যতগুলি সভা হয়েছে জেলায় তার অধিকাংশেই অভিষেকের ছবি। একমাত্র ব্যতিক্রম শমসেরগঞ্জে জেলা পরিষদ কর্মাধ্যক্ষ আনারুল তথা বিপ্লবের সভায় এখনও শুভেন্দুর মুখ।
সব ব্লকে দলীয় সভাপতি নির্বাচন তেমন সহজ নয়। খড়গ্রাম ব্লক সভাপতি মোফিজুদ্দিন মণ্ডলের মৃত্যুর পর ওই ব্লকের তৃণমূলের নেতৃত্ব কে দেবেন তা নিয়ে দলের মধ্যেই শুরু হয়েছে জল্পনা। ওই ব্লকটিকে সাংগঠনিক ভাবে দু’টি ভাগ করে দক্ষিণ ব্লকে সমরেন্দ্রনাথ সাহা ও উত্তর ব্লকে মোজিফুদ্দিনকে সভাপতি করা হয়। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে খড়গ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রায় ৩০ হাজার ভোট লিড পায়।
এখন তাই মোফিজুদ্দিনের বিকল্প কে, তা নিয়ে জোর জল্পনা। আবার রেজিনগর এলাকায় হুমায়ুন কবীর দলে যোগ দেওয়ায় সমস্যা বেড়েছে বেলডাঙার দু’টি ব্লকে । ব্লক সভাপতি পদে নামের তালিকা অতি দীর্ঘ সেখানে। মন্ত্রী জাকির হোসেন ও জঙ্গিপুরের পুরপ্রধানের লড়াই, শামসেরগঞ্জে আমিরুল ও খলিলুর রহমানের অনুগতদের বিরোধ, ডোমকলে সৌমিক হোসেনের সঙ্গে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর বিবাদ— সব মিলিয়ে দলীয় কোন্দল রুখতে গিয়ে তা আরও বেশি পেকে উঠবে না তো, দলের অন্দরে এখন মাথা ঠোকাঠুকি এই প্রশ্ন ঘিরে।