নাগরিকত্ব বিল পাশের পর বিজেপির বিজয় মিছিল। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: প্রণব দেবনাথ
নাগরিকত্ব বিল নিয়ে এখনও পর্যন্ত যতটা গুটিয়ে রয়েছে তৃণমূল, ঠিক ততটাই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বিজেপি।
করিমপুর উপ-নির্বাচনে হারের পর মুষড়ে পড়া বিজেপি নেতারা নতুন উৎসাহে জেলায় সিএবি নিয়ে প্রচারে তৎপর হয়ে উঠেছেন।
বিরোধীদের মোকাবিলায় তাঁরা বিভিন্ন কর্মসূচি নিতে শুরু করেছেন। বসে নেই আরএসএসও। তাদের প্রতিনিধিরাও গ্রামে গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলের পক্ষে প্রচার শুর করে দিয়েছেন।
রাজ্যসভায় সিএবি পাশ হওয়ার পরেই বৃহস্পতিবার নদিয়ার বিভিন্ন জায়গায় উৎসব পালন করেছেন বিজেপি কর্মীরা। শান্তিপুর, কল্যাণী-সহ বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করেন দলের নেতা-কর্মীরা।
এই বিল থেকে বিজেপি কতটা রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে সক্ষম হবে তা বোঝার সময় এখনও আসেনি। কিন্তু বিজেপি-র নেতা-কর্মীরা এর থেকে লাভবান হওয়ার চেষ্টায় ত্রুটি রাখছেন না। প্রায় এক মাস আগেই আরএসএস একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে কাজ শুরু করেছিল বলে রাজনৈতিক সূত্রের খবর।
মাসখানেক আগে কৃষ্ণনগরে এসেছিলেন আরএসএসের ক্ষেত্র প্রচারক প্রদীপ যোশী। তিনি পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, আন্দামান ও সিকিমের দায়িত্বে আছেন। প্রথম দিনই তিনি জেলার আরএসএস নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে নাগরিকত্ব বিলে ঠিক কী-কী আছে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। সাংগঠনিক ভাবে বিলের প্রচারে কী করতে হবে সেই পন্থাও বাতলান। পর দিন বিজেপি ও অন্য শাখা সংগঠনের নেতৃত্বের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন।
আরএসএস সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় তাদের মতাদর্শে বিশ্বাস রাখা বিভিন্ন পেশার ১৬০০ জনকে নিয়ে একটি দল তৈরি করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়রের মতো অনেকেই আছেন। তাঁরা প্রতিদিন একাধিক দলে ভাগ হয়ে জেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এক-এক দিন সাত থেকে দশটি করে গ্রামে বৈঠক হচ্ছে। প্রতিটা বুথে আরএসএসের ভাবাদর্শে বিশ্বাস করেন এমন দু’জন যুবকে বাছা হয়েছে। তাঁরাও থাকছেন এই সব বৈঠকে। এঁরা মূলত গ্রামে কোন-কোন পরিবার হিন্দু তা চিহ্নিত করছেন। এঁরাই নাগরিকত্বের গোলাপি রঙের ফর্ম নিয়ে যাবেন হিন্দুদের বাড়ি-বাড়ি। সেই ফর্ম ফিলাপ করতে ও জমা দিতে সাহায্য করবে। আরএসএস সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে গেরুয়াপন্থী একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে নাগরিকপঞ্জি তৈরির কাজে ব্যবহার করা হবে। নিয়োগ করা হবে ‘নাগরিক পঞ্জিকরণ সহায়ক’। এই কাজের জন্য জেলায় আরএসএস এগারো জনের একটি কমিটিও তৈরি করেছে।
একেবারে বুথস্তরে বিজেপি কর্মীরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হিন্দুদের আশ্বস্ত করবেন যে, তাঁদের নাম বাদ যাবে না। সেই সঙ্গে আরও প্রচার করবেন, তৃণমূল ও সিপিএম আসলে হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে। চলবে মিটিং-মিছিল, পথসভা। বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকার বলছেন, “মানুষ কিন্তু এ বার তৃণমূল, সিপিএমকে বুঝে নেবেন। তাঁদের ভুল বোঝানোর জন্য ওদের থেকে জবাব চাইবেন।” প্রতিটি বুথ স্তরে এক জন করে প্রমূখ নিয়োগ করেছে বিজেপি, যাঁরা স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বাড়ি-বাড়ি ঘুরে নাগরিকত্ব বিলের ইতিবাচক দিক তুলে ধরবেন। সেই সঙ্গে বিলি করবেন লিফলট। তাঁদের কাজ ‘সুপারভাইজার’ করার জন্য মণ্ডল স্তরে প্রমূখ নিয়োগ করা হয়েছে। দলের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মানবেন্দ্রনাথ রায় বলছেন, “দু এক দিনের মধ্যেই আমরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে এই বিলের সুফলগুলি মানুষের কাছে তুলে ধরব।”