প্রতীকী ছবি।
উৎসবের রেশ মিটতে না মিটতে আবারও নাগরিকত্ব বিলকে হাতিয়ার করে ভোটের লড়াইয়ে নামতে চাইছে বিজেপি। বিশেষ করে নদিয়া জেলায় মতুয়া ভোটকে পুরোপুরি নিজেদের দিকে টানতে সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে বিজেপিপন্থী মতুয়া নেতৃত্ব। বিশেষ করে মতুয়া প্রভাবিত নদিয়ার দক্ষিণ অংশে তাঁদের সংগঠনকে চাঙ্গা করতে একাধিক কর্মসূচি নিতে শুরু করেছেন। অনেকেই মনে করছেন, সামনে মতুয়া সংগঠনকে রেখে আড়াল থেকে বিজেপিই ভোটের বাদ্যি বাজিয়ে দিতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রধান হাতিয়ার নাগরিকত্ব বিল।
লোকসভা ভোটে রানাঘাট কেন্দ্রে বিজেপির কাছে পর্যুদস্ত হতে হয়েছিল তৃণমূলকে। শেষ মুহূর্তে পর্যন্ত বিজেপির প্রার্থী নিয়ে নানা জটিলতার পরও তাদের কাছে তৃণমূলকে হারতে হয়েছিল প্রায় ২ লক্ষ ৩৩ হাজার ভোটে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতে, সেটা সম্ভব হয়েছিল মতুয়া ভোটের জন্যই। সিপিএমের পর মতুয়াদের মধ্যে তৃণমূলের ব্যাপক প্রভাব তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের হাত ধরে মতুয়াদের মধ্যে তৃণমূলের একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তিনি খুন হয়ে যাওয়ার পর মতুয়াদের মধ্যে তৃণমূলের প্রভাব হালকা হতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে সেই শূন্য স্থান দখল করতে শুরু করে বিজেপি। আর সেটা প্রবল আকার নিতে থাকে নাগরিকত্ব বিলকে সামনে রেখে। যার সুফল তারা হাতেনাতে পেয়ে যায় লোকসভা ভোটে। সামনে বিধানসভা ভোট। সেই ভোটেও তারা এই নাগরিকত্ব বিলকে হাতিয়ার করেই এবারও নির্বাচনী সাফল্য পেতে চাইছে। যার আভাস পাওয়া যাচ্ছে উৎসব মিটতে না মিটতে বিজেপির মতুয়া নেতাদের সক্রিয়তায়।
১৯ নভেম্বর হাঁসখালির বগুলায় জনসভা করছে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ। মুড়াগাছা থেকে তারা মিছিল করে আসবে বগুলা শ্রীকৃষ্ণ কলেজের মাঠে। সেখানে জনসভার আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে বক্তৃতা করবেন প্রথম সারির দুই নেতা ঠাকুরবাড়ির শান্তনু ঠাকুর এবং সুব্রত ঠাকুর। সেই সমাবেশে শুধু নদিয়ার দক্ষিণ অংশ থেকে ১৫ হাজার মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ উপস্থিত থাকবেন বলে দাবি করেছেন নেতারা। এর পাশাপাশি ২২ নভেম্বর চাকদহতেও একই রকম কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। যদিও সংগঠনের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মুকুটমণি অধিকারী বলেন, “এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। এটা একেবারেই আমাদের মতুয়া সংগঠনের কর্মসূচি।” তবে পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ মতুয়া-সহ সমস্ত শরণার্থীকে নাগরিকত্ব দিতে চাইছেন। সেই কারণেই মতুয়া সম্প্রদায়ের সমস্ত মানুষ বিজেপির সমর্থনে আছে।
এক দিকে বিজেপির হাতিয়ার নাগরিকত্ব বিল, পাশাপাশি অমিত শাহের মতুয়া পরিবারের ঘরে পাত পেড়ে খাওয়ার মতো কর্মসূচির মাধ্যমে এই রাজ্যের মতুয়া সম্প্রদায়ের মন জয় করার চেষ্টা চলছে। অন্য দিকে আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদ গঠন। আগামী বিধানসভা ভোটে দুই পক্ষই মতুয়াদের মন পেতে মরিয়া।