নেই প্রার্থীর নাম। নিজস্ব চিত্র
আবার যেন সেই লোকসভা নির্বাচনেরই পুনরাবৃত্তি।
তৃণমূল এবং বাম (সঙ্গে কংগ্রেসও) করিমপুর উপনির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারে নেমে পড়েছে। বিজেপি এখনও প্রার্থী ঘোষণাই করতে পারল না। ফলে দেওয়াল লেখা থেকে বাড়ি-বাড়ি প্রচার, প্রথম ল্যাপে সবেতেই পিছিয়ে পড়ছে বিজেপি। কর্মীরাও অধৈর্য হয়ে উঠছেন। আজ, শনিবার প্রার্থী ঘোষণা হতে পারে, এই আশাই এখন তাঁদের সম্বল।
বৃহস্পতিবার একই সঙ্গে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছে তৃণমূল এবং সিপিএম। কিন্তু শুক্রবার রাত পর্যন্ত বিজেপি প্রার্থীর নাম জানা যায়নি। কেন্দ্রীয় তথা রাজ্য নেতৃত্ব কাকে প্রার্থী করে পাঠাবেন, তিনি এলাকারই কেউ নাকি বাইরে, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় এলাকার বিজেপি নেতাকর্মীরা।
জোটের প্রার্থী হিসাবে সিপিএমের গোলাম রাব্বির নাম ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে করিমপুরে মিছিল করেছে সিপিএম। শুক্রবার বেশ কিছু জায়গায় তারা দেওয়ালও লিখে ফেলেছে। তৃনমূলের প্রার্থী বিমলেন্দু সিংহ রায় এ দিনই করিমপুরে এসে কর্মী বৈঠক করেন। সেখানে বিজেপি নেতাকর্মীরা কার্যত বসে-বসে কড়িকাঠ গুনছেন।
গত লোকসভা ভোটেও কৃষ্ণনগর এবং মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে অন্য দলের প্রার্থীর নাম ঘোষণা হওয়ার ঢের পরে বিজেপির প্রার্থী ঘোষণা হয়েছিল। প্রচারে তার মাসুল কতটা দিতে হয়েছে, তা ওই দুই এলাকার নেতারাই বলতে পারবেন। রানাঘাট কেন্দ্রে তো প্রথমে অনেক দেরি করে মুকুটমণি অধিকারীর নাম ঘোষণা করা এবং আইনি জটিলতায় তিনি দাঁড়াতে না পারায় একেবারে শেষ মুহূর্তে জগন্নাথ সরকারের মনোনয়ন পেশ নিয়ে একপ্রস্ত নাটকই হয়ে গিয়েছিল। তার জেরে প্রচারে ভাল রকম ধাক্কা খায় বিজেপি, যদিও তা ভোটে তেমন প্রভাব ফেলেনি। বিপুল ভোটে জিতে জগন্নাথ নদিয়ায় দলের খাতা খোলেন।
করিমপুরেও কি তেমন কোনও অলৌকিকের আশাতেই আছেন স্থানীয় বিজেপি নেতাকর্মীরা?
স্থানীয় বিজেপি নেতা তথা জেলা কমিটির সদস্য উদয় সিহি সরাসরি এ নিয়ে মন্তব্য না করলেও তাঁর আক্ষেপ, “অন্য দল প্রচার শুরু করে দিয়েছে। অথচ আমাদের প্রচারের প্রস্তুতিই শুরু হয়নি। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রার্থী বাছাই করলেও ঘোষণায় দেরি হওয়ায় কর্মীদের মনোবল নষ্ট হচ্ছে। খুব শিগগির প্রার্থীর নাম জানিয়ে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত।”
বিজেপির উত্তর জেলা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নিলয় সাহা অবশ্য দাবি করেন, প্রচারে পিছিয়ে থাকার প্রশ্ন নেই। আপাতত প্রার্থীর নাম ফাঁকা রেখেই দেওয়াল লিখন শুরু হয়েছে। তাঁর ব্যাখ্যা, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব মিলিত ভাবে প্রার্থী নির্বাচন করেন। তাই একটু দেরি হচ্ছে। তবে তার প্রভাব ভোটে পড়বে না।
বিজেপি সূত্রের খবর, করিমপুরে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের নাম শোনা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলেই তিনি এসে যুবমোর্চার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া সভা করে গিয়েছেন। তবে তৃণমূল এবং বাম-কংগ্রেস জোট যেখানে ‘ঘরের লোক’ দাঁড় করিয়েছে, সেখানে ‘বহিরাগত’ জয়প্রকাশের গ্রহণযোগ্যতা কতটা থাকবে, তা নিয়ে সন্দিহান এলাকার নেতাদের কেউ-কেউ। আর এক অংশ আবার মনে করছেন, স্থানীয় মেজো-সেজো নেতার বদলে রাজ্যস্তরের নেতাকে প্রার্থী করা হলেই স্থানীয় স্তরের বিবাদ সরিয়ে রেখে একযোগে লড়াই করা যাবে।
বিজেপির করিমপুর জেডপি-৪ সভাপতি অমল ঘোষের দাবি, আজ, শনিবার প্রার্থীর নাম ঘোষণা হবে। এর আগে এলাকা থেকে ১৭ জনের নাম রাজ্য দফতরে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এক বার আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা হোক, তার পর দেখবেন সকলেই একযোগে প্রচারে ঝাপিয়ে পড়বে।’’