চাকদহে পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লেন রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র।
বিজেপির হয়ে প্রচারে এসে চাকদহে পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লেন রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পুরভোটের প্রচারে এসে পুর এলাকার ভিতরেই তিনি ঢুকতে পারলেন না, চাকদহ শহরের বাইরে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সভা করে তাঁকে ফিরে যেতে হল তাঁর অভিযোগ।
সোমবার চাকদহে ওই সভা শেষে কয়েক ফুট দূরে চাকদহ শহরের দিকে যেতে গেলে শুভেন্দুর পথ আটকায় পুলিশ। শুভেন্দু বলেন, তিনি চা খেতে যাচ্ছেন। তাঁকে বলা হয়,খানিকটা দূরে তৃণমূলের সভা হচ্ছে। তাই যেতে দেওয়া যাবে না। এই নিয়ে চাকদহ থানার আইসি বিমানকুমার মৃধার সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন শুভেন্দু। এই সময়েই শুভেন্দুকে বলতে শোনা যায়, “আমাকে টাচ করে দেখুন।” পুলিশের কাছে বাধা পেয়ে ফিরে যান নিজের গাড়িতে উঠে তিনি চিৎকার করেন, “পুলিশ তুমি উর্দি ছাড়ো।” গাড়ির পাশে থাকা বিজেপি কর্মীরা স্লোগান তোলেন, “তৃণমূলের ঝান্ডা ধরো।”
চাকদহ থানার বক্তব্য, ওই সময়ে একশো মিটার দূরে রথতলায় তৃণমূলের সভা চলছিল। তারা আগে থেকে সেখানে সভা করার অনুমতি নিয়েছিল। সেই কারনে শহরের পশ্চিম পারে সভা করতে বলা হয়েছিল বিজেপি নেতাদের। তাতে তাঁরা রাজি হননি। শেষে তাঁরাই বাসস্ট্যান্ডের কাছে সভা করার অনুমতি চান। সেই মতো অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাতে কৃষ্ণনগর শহরে সভায় শুভেন্দু বলেন, “চাকদহ পুর এলাকায় মিটিং করতে দিল না। আমি সিপিএমের আমলেও রাজনীতি করেছি, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই করেছি। নন্দীগ্রাম, জঙ্গলমহলে লড়াই করেছি। কিন্তু সিপিএমের দোষ থাকলেও বলব যে এমনটা দেখিনি।”
মঙ্গলবার হাইকোর্টের রায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, “শুনানি শেষ হয়েছে। আগামিকাল প্রধান বিচারপতি রায় দেবেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পুরসভার ভোট হবে কি না।” চাকদহ পুরসভায় উন্নয়ন হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন। তাঁর হুঁশিয়ারি, “চাকদহ বর্ডার দিয়ে যারা গরু পাচার করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পরে রানাঘাটে সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দু দাবি করেন, “আনিসকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ খুন করেছে, অথবা তৃণমূলের নেতারা পুলিশের পোশাক ব্যবহার করে খুন করেছে। সিবিআই তদন্ত করলেই পরিষ্কার হয়ে যেত।” জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র বাণীকুমার রায় পাল্টা বলেন, “আনিসকে তৃণমূল কেন মারতে যাবে? সঠিক তদন্তের জন্য তো ‘সিট’ গঠন করা হয়েছে! আসলে একের পর এক নির্বাচনে হেরে বিজেপি নেতাদের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।”
রাতে কৃষ্ণনগরে এসে মুকুল রায়কে উদ্দেশে কটাক্ষ করেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, “সেই এমএলএ আবার অদ্ভুত এমএলএ। তিনি উত্তরীর পরছেন ভাইপোর কাছ থেকে, ভাইপোর পিসি বলছে ও খুব একটা খারাপ কথা বলে নি ভোটের সময়ে, ও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগে ছিল। ওকে আমরা ফিরিয়ে নিলাম। আবার বিরোধী দল নেতা দলত্যাগ বিরোধী আইনে যেই গুঁতো দিয়েছি, বলছে আমি তো বিজেপি।” কৃষ্ণনগর থেকে জেতার পিছনে মুকুল রায়ের কোনও কৃতিত্ব নেই বলেও তিনি দাবি করেন। চেষ্টা করেও রাতে মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
ঘটনাচক্রে, গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর শহরে বিপুল ভোট পাওয়া বিজেপিকে পুর নির্বাচনের ময়দানে তেমন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে শুভেন্দুর দাবি, ১৯৯৮ সাল থেকে এই শহর সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়কে জেতানোর মধ্যে দিয়েই বিজেপির সঙ্গে আছে। সম্প্রতি তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম দাবি করেছেন, শুভেন্দু বিজেপি ছাড়ছেন। কৃষ্ণনগরের সভায় তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শুভেন্দু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বরং মেজাজ হারান।