গেরুয়া নয় ঘর, বসেন না বিরোধী নেত্রী 

শুধু তা-ই নয়, দেবস্মিতা এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন যে যত দিন না তাঁর ঘরের দেওয়ালে গেরুয়া রং হচ্ছে, তত দিন তিনি ওই ঘরে পা দেবেন না।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৪৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

বিজেপির এক জনপ্রতিনিধির ঘরের রং কী হবে, তা নিয়ে জেলা পরিষদে টানাপড়েন তুঙ্গে। তার জেরে তিন বার রং করা হল একই ঘরের দেওয়ালে। তার পরেও দেওয়ালের রং পছন্দ না হওয়ায় জেলা পরিষদে এলেও নিজের ঘরে এখনও পা দেননি বিরোধী দলনেত্রী দেবস্মিতা চক্রবর্তী।

Advertisement

শুধু তা-ই নয়, দেবস্মিতা এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন যে যত দিন না তাঁর ঘরের দেওয়ালে গেরুয়া রং হচ্ছে, তত দিন তিনি ওই ঘরে পা দেবেন না। তা হলে সাধারণ মানুষ তাঁর সঙ্গে কোথায় দেখা করবেন? এ প্রশ্নের কোনও সদুত্তর তিনি দেননি।

বিরোধী দলনেত্রীর ঘর কোনটা হবে, তা নিয়ে এর আগেই বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। প্রথমে ঘর দেওয়া হচ্ছে না বলে তিনি সভাধিপতির কাছে অভিযোগ করেন। পরে ঘরের ব্যবস্থা হলেও দেবস্মিতা অভিযোগ করেন, যে ঘর নির্দিষ্ট করা হয়েছে তা নেহাতই ছোট। তা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে তিনি সভাধিপতিকে চিঠিও দেন। পরে তাঁর জন্য অপেক্ষাকৃত বড় একটি ঘর বাছা হয়। সেই ঘরের সঙ্গে একটু ‘অ্যান্টিচেম্বার’ও আছে।

Advertisement

সেই ঘরের চেয়ার-টেবিল এবং ‘অ্যান্টিচেম্বার’ সোফাসেট ও অন্য উপকরণ দিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার জন্য লাখ দেড়ে‌ক টাকা অনুমোদন করা হয়েছিল। কাজও শুরু হয়ে যায়। প্রথমে ঘরের রং করা হয় সবুজ। কিন্তু সেই রং দেবস্মিতার নাপসন্দ, তিনি গেরুয়া রং করতে বলেন। তাঁর দাবি অনুয়ায়ী গেরুয়া রং করে দেওয়া হয়।

কিন্তু গোল বাধে জেলা পরিষদের সভাধিপতি, তৃণমূলের রিক্তা কুণ্ডু বিরোধী দলনেত্রীর ঘর দেখতে আসার পরেই। ঘরে গেরুয়া রং দেখে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেন। গেরুয়া মুছে ফের অন্য রং করার নির্দেশও দেন। সেই মতো আবার ঘরে নতুন করে রং করা হয়— এ বার হালকা সবুজ। ঘরের রং গিরগিটির মতো ফের পাল্টে যাওয়ায় বেজায় খেপে যান দেবস্মিতা। তিনি জানিয়ে দেন, গেরুয়া রং না হলে তিনি এই ঘরে ঢুকবেন না। সেই মর্মে সভাধিপতিকে চিঠিও দেন।

কিন্তু তার পরেও দেওয়াল আর রং পাল্টায়নি। দেবস্মিতাও আর সেই ঘরে পা দেননি। প্রায় তিন মাস ধরে পড়ে আছে তিন বার রং পাল্টানো সেই ঘর। দেবস্মিতার বক্তব্য, “যে ঘরটি ব্যবহার করবে, দেওয়ালে তার পছন্দের রং থাকাটাই বাঞ্ছনীয় নয় কি?’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি পাল্টা বক্তব্য, “এটা মনে রাখা উচিত যে আমরা সকলেই জনপ্রতিনিধি। কোনও দলের প্রতিনিধি নই। এটা প্রশাসনিক দফতর, কারও পার্টি অফিস নয় যে দলের রং ব্যবহার করা হবে।” নিজের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “এখানে তো আমার বা কর্মাধ্যক্ষদের ঘরে তৃণমূলের রং করা হয়নি। এমনকি নীল-সাদাও করা হয়নি। আমাদের আগে যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁরাও এটা করেননি। আশা করি, আগামী দিনে যাঁরা আসবেন, তাঁরাও এমনটা করবেন না।”

দেবস্মিতা অবশ্য দাবি করছেন, ‘‘এটা কোনও রাজনৈতিক দলের রং নয়। এটা ত্যাগের রং। আমরা প্রিয় রং।’’ এই রং তাঁর কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সম্ভবত তা বোঝাতেই তিনি যোগ করেন, “আমায় জ্যোতিষী বলেছেন গেরুয়া রং ব্যবহার করতে। তাই শপথ নেওয়ার দিনেও আমি গেরুয়া শাড়ি পরে গিয়েছিলাম।”

আপাতত এই রঙের রাজনীতি নিয়ে জেলা পরিষদের আনাচেকানাচে নানা গুঞ্জন চলছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই ঘর রং করতে প্রতি বার প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। জনগণের টাকা এ ভাবে অপচয় করা জনপ্রতিনিধিদের কতটা মানায়, সেই প্রশ্ন উঠছে। রং নিয়ে জনপ্রতিনিধির যতটা মাথাব্যথা, তাতে মানুষকে পরিষেবা দেওয়াটা যে গৌণ হয়ে যাচ্ছে, উঠছে সেই কথাও। এক কর্মীর কটাক্ষ, “মানুষ নানা সমস্যা নিয়ে বিরোধী দলনেত্রীর সঙ্গে দেখা করবে বলেই তো তাঁকে ঘর দেওয়া হয়। সেখানে তিনি না বসলে মানুয তাঁকে কোথায় পাবে?” দেবস্মিতার দাবি, ‘‘আমি ওই ঘরে না বসলেও রোজই তো জেলা পরিষদে যাই। ওই চত্বরেই মানুষ আমার সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানায়।’’

জেলা পরিষদের কর্মীদের একাংশের মতে আবার, সামান্য একটা দেওয়ালের রং নিয়ে সভাধিপতি এই রাজনীতি না করলেই পারতেন। যা শুনে রিক্তা উল্টে বলছেন, ‘‘আমি কোথায় রাজনীতি করলাম? মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জায়গায় রাজনীতি করতে দেব না বলেই তো ওই ঘরের গেরুয়া রং মুছিয়েছি!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement