—প্রতীকী ছবি।
আগামী বিধানসভা নির্বাচনে নদিয়ার নবদ্বীপ আসনটিকে বিজেপি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। মঠ মন্দিরের শহর, চৈতন্য জন্মভূমি নবদ্বীপ স্বাভাবিক কারণেই পদ্ম শিবিরের অন্যতম পছন্দের জায়গা। তার উপর গত লোকসভা ভোটে নবদ্বীপ শহর অঞ্চল থেকে প্রায় ১২ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে থাকার পর থেকে নবদ্বীপ নিয়ে বিজেপির ভাবনা চিন্তার ধরণ বদলে গিয়েছে। তাই নবদ্বীপের শহর এবং গ্রামাঞ্চলের সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস থেকে শুরু করে আর্থিক অবস্থানের ক্ষেত্র সমীক্ষা সেরে জোরকদমে সংগঠন তৈরি এবং প্রচারের কাজে নেমে পড়েছে তারা।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সমীক্ষা থেকে বিজেপির কাছে যে তথ্য পৌঁছেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে নবদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটে গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক অন্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের (ওবিসি) ভোট। সমীক্ষা জানাচ্ছে, নবদ্বীপে মোট ভোটারের ৫২ শতাংশের বেশি ওবিসি সম্প্রদায় ভুক্ত। তাঁদের বেশির ভাগই নবদ্বীপের আটটি পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। সে কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই গ্রামীণ নবদ্বীপের ওবিসি ভোটারদের কাছে পৌঁছনোর নীলনকশা তৈরি করে ফেলেছে বিজেপি।
দলের ওবিসি মোর্চার রাজ্য নেতৃত্বের সরাসরি নজরদারিতে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে মাসদেড়েক আগে থেকে। নভেম্বরের প্রথম দিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের উপস্থিতিতে বিজেপির ওবিসি মোর্চার রাজ্য সাংগঠনিক সভা হয় মায়াপুরে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মোর্চার সমস্ত রাজ্য স্তরের পদাধিকারী।
জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলের শক্তঘাঁটি নবদ্বীপে ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে মাথা চাড়া দিয়েছিল পদ্মফুল। নবদ্বীপ পুর এলাকায় তৃণমূলের থেকে এগিয়ে গেলেও বিজেপি গ্রামীণ নবদ্বীপে পিছিয়ে পড়ে। ফলাফলের এই হিসেব মাথায় রেখেই আসন্ন বিধানসভা ভোটে গ্রামীণ নবদ্বীপ নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। এই প্রসঙ্গে বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক সহ সভাপতি গৌতম পাল বলেন, “আমরা দেখেছি, নবদ্বীপের আটটি পঞ্চায়েতের ভোটারদের সম্প্রদায় গত বিন্যাসে সব ক’টিতেই ওবিসিদের প্রাধান্য রয়েছে। যেমন মায়াপুর ১ এবং ২ নম্বর পঞ্চায়েত, বাবলারি পঞ্চায়েতে ঘোষ সম্প্রদায়। স্বরূপগঞ্জ, চরমাঝদিয়া-চরব্রহ্মনগর, এবং মাঝদিয়া-পানশিলার একটি অংশ জুড়ে দেবনাথেরা সংখ্যাগুরু। তেমনই মহিশুরা, ফকিরডাঙা-ঘোলাপাড়া এবং মায়াপুরের একটি অংশ জুড়ে সংখ্যালঘু ওবিসি সম্প্রদায়ের ভোটাররা সংখ্যায় বেশি। সব মিলিয়ে পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি। আমরা তাঁদের কাছে পৌঁছতে সাংগঠনিক ভাবে নানা পরিকল্পনা নিয়েছি।”
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধানসভা ধরে ত্রিস্তরীয় সংগঠন গড়ার কাজ চলছে। নবদ্বীপ বিধানসভার জন্য গড়া হয়েছে একটি ৮৪ জনের ব্যবস্থাপক কমিটি, তার নীচে পাঁচটি মণ্ডলের জন্য ৬১ জনের মণ্ডল কমিটি। তার নীচে শক্তিকেন্দ্র বা ওয়ার্ড কমিটি। নবদ্বীপ বিধানসভার ৫২টি শক্তিকেন্দ্র ভেঙে আরও ছোট করে, সংখ্যায় বাড়ানো হচ্ছে শক্তিকেন্দ্র। প্রতিটি শক্তিকেন্দ্রের অধীনে তিন থেকে চারটি বুথ। প্রতি বুথের জন্য ফের আলাদা আলাদা কমিটি। জানা গিয়েছে, বিগত লোকসভা ভোটের নিরিখে বুথগুলিকে এ, বি, সি, ডি— এই চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন, বিজেপি লিড পেয়েছে এমন বুথ ‘এ’ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
ওবিসি ভোটারদের কাছে গিয়ে কী বলছেন? জবাবে বিজেপির ওবিসি মোর্চার নদিয়া জেলা কমিটির সদস্য তথা নবদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রে ওবিসি মোর্চার ভারপ্রাপ্ত সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “এ রাজ্যের ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্তরা জানেন না, তাঁরা প্রথম থেকেই বঞ্চিত। গোটা দেশে যখন ওবিসিদের জন্য ২৭ শতাংশ সংরক্ষণ নির্দিষ্ট, তখন আমাদের রাজ্যে তা মাত্র ১৭ শতাংশ। কেন ১০ শতাংশ প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন? এটাই বলছি।’’
পাশাপাশি তিনি জানান, ওই ১৭ শতাংশের মধ্যে আবার দু’টি ভাগ করা হয়েছে। ‘এ’ এবং ‘বি’ ক্যাটিগরি। ‘এ’ শুধু সংখ্যালঘুদের জন্য, সেখানে ১০ শতাংশ সংরক্ষিত। ‘বি’ বাকি সমস্ত ওবিসিদের জন্য, তাতে ৭ শতাংশ। তাহলে যাঁরা ‘বি’ ক্যাটিগরিভুক্ত ওবিসি তাঁদের কাছে ২০ শতাংশ সংরক্ষণের সুবিধা পৌঁছচ্ছে না।
যদিও এ সব নিয়ে ভাবতে রাজি নন নবদ্বীপের তৃণমূল নেতৃত্ব। চার বারের বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বলেন, “গ্রামের মানুষ ওদের সঙ্গে নেই। সেটা ভোটের ফল এবং ওদের কথাতেই প্রমাণিত। এ সব করে কিছু লাভ হবে না।”