পতাকা: বিলাসপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
বাম যত দুর্বল হচ্ছে, ততই লম্বা হচ্ছে রামের ছায়া। এমনকী ৮০ শতাংশেরও বেশি মুসলিম অধ্যুষিত ডোমকলে।
এমনকী সিপিএম বিধায়ক তথা ডোমকলের তাবড় নেতা আনিসুর রহমানের নিজের গ্রাম বিলাসপুর, যেখানে ১০০ শতাংশই মুসলিম, সেখানেও পাড়ায়-পাড়ায় উড়ছে পদ্মলাঞ্ছিত পতাকা। ঠিক যেমন দেখা গিয়েছিল পাশের জেলা বীরভূমের সংখ্যালঘুদের মধ্যে, তেমনই।
যে ডোমকল গত বছরও আনিসুর রহমানকে জিতিয়ে এনেছে, তার এই হঠাৎ পরিবর্তন কেন?
সিপিএমের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, প্রধান কারণ নেতাদের প্রতি গভীর অনাস্থা আর নিরাপত্তার অভাব। তাতে সম্প্রতি আরও হাওয়া জুগিয়েছে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে জিতেও সিপিএমের লোকাল সদস্য রফিকুল ইসলামের তৃণমূলে চলে যাওয়া। যাঁরা কোনও ভাবেই তৃণমূলের পায়ে জীবন উৎসর্গ করতে চান না, তাঁরা বুঝে পাচ্ছেন না, কীসের ভরসায় পার্টিটা করবেন? কাজেই যে দিলীপ ঘোষেরা বুক চিতিয়ে হুঙ্কার দিচ্ছেন, তাঁদেরই আঁকড়ে ধরতে চাইছেন এঁদের একটা বড় অংশ।
বিলাসপুরের এক সিপিএম কর্মীর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল যে কায়দায় ভোটের পথে হাঁটছে তাতে বিজেপি ছাড়া আর কেউ প্রতিরোধ করার নেই। আমাদের নেতাদের কথায় পুলিশও কান দিচ্ছে না। ফলে আগামী দিনে বেঁচে থাকতে গেলে বা ভোট দিতে চাইলে বিজেপি করা ছাড়া উপায় নেই।’’
বিজেপির দাবি, যে তিনটি ওয়ার্ডে জোট জিতেছে (জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে দু’জন ইতিমধ্যে তৃণমূলে গিয়েছেন, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের বিল্লাল হোসেনও রয়েছেন টানাপড়েনে), সেই তিন এলাকা থেকেই কলেজ-পড়ুয়া ও নতুন প্রজন্মের কর্মীরা দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। বিজেপির রাজ্য যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক শাখারভ সরকার বলেন, ‘‘এর আগে ডোমকলে প্রার্থী দিতে গিয়েই বেগ পেতে হত আমাদের। আর এখন অনেক নতুন প্রজন্মের ছেলে, এমনকী প্রথম ভোটারেরাও যোগাযাগ করছে আমাদের সঙ্গে। কয়েক দিনের মধ্যেই ডোমকলে আমরা ঘরোয়া বৈঠক করব।’’ ধস যে শুধু সিপিএমেই, তা নয়। কংগ্রেসের অনেক কর্মীও এখন ব্লক ও জেলা নেতাদের দিনরাত ফোন করে বলছেন, ‘‘আর উপায় নেই দাদা। আপনাদের পক্ষে আমাদের ভোট রক্ষা করা আর সম্ভব নয়। নিরাপত্তা দিতে পারলে এক মাত্র বিজেপিই পারবে। তাই তৃণমূলকে জব্দ করতে আমরা বিজেপিই করব।’’
অসুস্থ আনিসুর কলকাতায় থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে ডোমকলের বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা নারায়ণ দাসও বলেন, ‘‘এই পুরভোট দেখে আতঙ্কে অনেকেই এমন নানা কথা বলছেন। এমনটা হলে সকলের জন্যই খুব খারাপ হবে। মানুষের ঘরে-ঘরে গিয়ে বিজেপি কী জিনিস তা বোঝানোর দায়িত্ব কমরেডদেরই নিতে হবে।’’