ছবি: সংগৃহীত
মুর্শিদাবাদের বিড়ি মহল্লায় হাসির আলো আদৌ ফুটল কি না তা নিয়ে প্রশ্নটা থেকেই গেল।
প্রচারের অভাবে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সঙ্গে পরিচয় নেই তাঁদের। হাসির আলোয় বিদ্যুতে ছাড় নিয়েও রয়েছে সংশয়।
রাজ্য বাজেটে তিন মাসে ৭৫ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারে ছাড় দেওয়ার সুবিধে শেষ পর্যন্ত কত শতাংশ বিড়ি শ্রমিক পরিবার পাবেন, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে বিড়ি শ্রমিক সংগঠনগুলি। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে অধিকাংশ বিড়ি শ্রমিকই বামেদের সিটু প্রভাবিত ‘বিড়ি শ্রমিক ও প্যাকার্স সংগঠন’-এর সদস্য। ওই সংগঠনের জেলা সভাপতি মহম্মদ আজাদ আলি বলছেন, “বাজারে কেরোসিন মেলে না। বিদ্যুৎ এখন প্রায় সব বিড়ি শ্রমিকের ঘরে। কিন্তু মাসে ২৫ ইউনিট, মানে দৈনিক এক ইউনিটের কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন এমন শ্রমিকের সংখ্যা ৫ শতাংশেরও নিচে। তাই এই ছাড়ে তেমন লাভ হবে বিড়ি শ্রমিকদের।”
বিড়ি মহল্লা সুতি ২ ব্লকের কংগ্রেস সভাপতি আলফাজুদ্দিন বিশ্বাস হিসেব দিচ্ছেন— “প্রতিটি শ্রমিক পরিবারে ছেলেমেয়েরা এখন পড়াশুনো করে। এ ছাড়া শৌচাগার, রান্নাঘর, বাড়ির উঠোন রয়েছে। প্রতি বাড়িতে যদি দু’টি করে ৪০ ওয়াটের আলোও জ্বলে তা হলে দৈনিক ৩ থেকে ৪ ইউনিট বিদ্যুৎ তো পুড়বেই। কাজেই মাসে ২৫ ইউনিট সীমা বেঁধে দেওয়ায় কত শতাংশ বিড়ি শ্রমিক বিনামূল্যে বিদ্যুতের সুবিধা পাবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’’ শ্রমিক মহল্লায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে— এলইডি আলো হলে এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সেই এলইডি আলোর যা দাম, তা কেনা সহজ নয়। তাঁদের দাবি, সুবিধা প্রাপকের সংখ্যা কিছু বাড়তে পাড়ে যদি পঞ্চায়েত থেকে প্রতি পরিবারে এলইডি বাল্ব বিনা মূল্যে শ্রমিক পরিবারগুলিকে দেওয়া যায়।
খরবোনার মহল্লায় ফরমান শেখ পুরনো বিড়ি শ্রমিক। তাঁর বাড়িতে ৩টি আলো জ্বলে। চলে ২টো পাখা। তিন মাসে বিদ্যুতের বিল আসে গড়ে ১২০০ টাকা। গরমে তা ১৪০০ টাকাও হয়। ফরমান বলছেন, “কম আলোয় বিড়ি বাঁধা যায় না। অন্তত ১০০ ওয়াটের আলো জ্বালাতে হয়। ছেলেরা বাড়িতে পড়াশোনা করে। তাদের ৬০ ওয়াটের বাল্ব দরকার হয়। তাই ৭৫ ইউনিটে ছাড়ের সুবিধা নেব কী করে?”
নতুন বাজারের বিড়ি শ্রমিক জাহাঙ্গির শেখ বলছেন, “বাড়িতে জনা তিনেক বিড়ি বাঁধে। গরমে ঘরে থাকা যায় না। ফ্যানও লাগাতে হয়েছে। তাই ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা বিদ্যুতের বিল মেটাতে হয় তিন মাস অন্তর। ৭৫ ইউনিটের ছাড় পেতে গেলে তো রাস্তার আলোয় বিড়ি বাঁধতে হবে!’’
সুতির লাইলি বেওয়ার অবশ্য তিন মাসের বিদ্যুতের বিল কিছুটা কম, ৭০০ টাকা। বলছেন, “একটি বাল্ব জ্বলে বেশি পাওয়ারের। দু’টো খুব কম। বিদ্যুতে ছাড় পাব সে আশা নেই। তিন মাসে অন্তত ১২৫ ইউনিটের মধ্যে না থাকলে সুবিধা পাওয়া দুষ্কর।” শমসেরগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলামের দাবি, “বহু বিড়ি শ্রমিক মাথা গুঁজে এক কামরার ঘরে থাকেন। তাঁরা এই সুবিধে পাবেন।’’