কাজের ফাঁকে বীরেন বসাক। নিজস্ব চিত্র
পেটের টানে এক দিন মাকু তুলে নিয়েছিলেন হাতে। সেই হাতেই এখন একের পর এক জাতীয় পুরস্কার নিচ্ছেন। পেয়েছেন পদ্মশ্রী, সন্ত কবির পুরস্কার। এ বার তাঁতের কাপড়ের উপর নতুন নক্সা করার জন্য ও কাপড়ের ‘মার্কেট ডেভলপমেন্ট’ বা বাজারের উন্নয়নের জন্য জাতীয় পুরস্কার এল ফুলিয়ার তাঁত শিল্পী বীরেন বসাকের ঝুলিতে।
১৯৬২ সাল নাগাদ তৎকালীন পূর্ববঙ্গে শুরু হয় জাতিদাঙ্গা। রাতের অন্ধকারে বাবা-মার হাত ধরে টাঙ্গাইল জেলার ঘারিঙ্গা গ্রাম থেকে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিল নয় বছরের ছোট্ট বালক। ঠাঁই নিয়েছিল ফুলিয়ায়। এক সময় কাপড় মাথায় নিয়ে কলকাতার গলিতে কাপড় ফেরি করে বেড়াতেন। সেখান থেকে আজ নিজের পরিশ্রমে এবং যোগ্যতায় পৌঁছেছেন সাফল্যের শিখরে। তাঁতের কাপড়ে অসাধারণ কাজের জন্য ২০১৫ সালেই পেয়ে যান জাতীয় পুরস্কার।
এ বার নক্সার পাশাপশি ব্যবসায় অসাধারণ সাফল্যের জন্যও তাকে জাতীয় পুরষ্কার দেওয়া হচ্ছে। সরকারি হিসাবে, তিনি ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯-তিন বছরে শাড়ি ব্যবসায় প্রায় ৭৫ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন। মূলত এই সাফল্যের কারণেই তাঁকে ‘ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর মার্কেট ডেভেলপমেন্ট’ দেওয়া হচ্ছে।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়, মনমোহন সিংহ, অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রতিকৃতি শাড়ির ভিতরে ফুটিয়ে তুলে তাঁদের উপহার দিয়েছেন এই শিল্পী।
তাঁর শিল্পের তালিকায় জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, নরসিংহ রাওয়ের প্রতিকৃতির শাড়িও রয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলা শাড়ি তুলে দিয়েছেন প্রাধানমন্ত্রীর হাতে।
তৈরি করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের কন্যাশ্রী প্রকল্পের শাড়িও। বীরেন বসাকের ছেলে অভিনব বসাক বলেন, “যে দু’টি ক্ষেত্রে বাবা এ বার পুরস্কার পাচ্ছেন সেই দু’টি ক্ষেত্রই এক জন শিল্পীর জন্য কঠিনতম কাজ। বাবাকে আজও অক্লান্ত পরিশ্রম করতে দেখি। এটা তারই স্বীকৃতি।”