নাম লিখছেন ভবানী। নিজস্ব চিত্র
সাক্ষর হলেন আট সন্তানের জননী ৭১ বছর বয়সী ভবানী দাস। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে শনিবার সেই সাক্ষরতার স্বীকৃতি পেলেন শংসাপত্রে। রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লকের রাজানগর গ্রামের ভবানীদেবীর সঙ্গে এ দিন সাক্ষরতার শংসাপত্র পেলেন গ্রামের আরও আট জন চল্লিশোর্ধ্ব মহিলা। তবে গ্রামের নিরক্ষর আরও ২২ মহিলার জন্য শুরু হবে গ্রামেরই প্রাথমিক স্কুলে দ্বিতীয় পর্বের সাক্ষরতা অভিযান।
রাজানগর গ্রামে জনসংখ্যা প্রায় ৪৬০০। সাক্ষরতার হার ৭১.৯৮ শতাংশ। বেশির ভাগেরই পেশা চাষবাস। গত বছর থেকে শুরু হয়েছিল রাজানগর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে সাক্ষরতার কর্মসূচি স্কুলেরই শিক্ষকদের চেষ্টায়। সমীক্ষায় সামনে এসেছিল গ্রামের ৩১ জন মহিলা অক্ষরজ্ঞানহীন। স্কুল ছুটির পরে সেই থেকেই বসতে শুরু করে মায়েদের ক্লাস। ১৯ জন সেখানে নাম লেখালেও করোনা পরিস্থিতিতে একে একে স্কুলে আসা বন্ধ হল অনেকেরই। রয়ে গেলেন ৯ জন। তাঁদেরই এক জন ৭১ বছর বয়েসী ভবানী। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ৬ ছেলের ৪ জনই আশপাশের গ্রামে চলে গিয়েছে। বাড়ির পাশেই থাকেন দুই ছেলে। স্বামী মারা বছর তিনেক আগে। ছেলে, মেয়ে, নাতি নাতনি সকলেই লেখাপড়া জানে। জানতেন স্বামীও। ৯ বছরে বিয়ে হয়ে ভবানী এসেছিলেন শ্বশুরবাড়ি। তাই স্কুলে যাওয়া হয়নি আর। নিজেই একাই থাকেন টালির ঘরে।
সাক্ষরতা স্কুলের শিক্ষিকা বুল্টি দাস বলছেন, ‘‘বয়স্ক মহিলা। একাই থাকেন। তাই আমরা আর তাঁকে স্কুলে আনার ব্যাপারে উৎসাহী হইনি। কিন্তু খবর পেয়ে তিনিই এক দিন স্কুলে এসে হাজির। তখন বলেছিলেন, পরিবারের সকলেই পড়াশোনা জানে, আর তাঁকে ব্যাঙ্কে টিপ সই দিয়ে ভাতার টাকা তুলতে হয়, তাই তিনি আর মূর্খ থাকতে চান না।’’ সেই শুরু। কিন্তু তার পরেই ভাঙল পা। মাস দু’য়েক স্কুলে যেতে পারেননি। তার পরে লকডাউন। তার পরে ক্লাস শুরু হতেই ভবানী সটান স্কুলে। বুল্টি বলেন, ‘‘৭১ বছরের ভবানীদেবীকে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।’’
শনিবার বিদ্যাসাগরের দু’শো বছরের জন্মদিনে ভবানীদেবী পরীক্ষা দিলেন। ডাক পড়তেই বেঞ্চ থেকে উঠে গেলেন বোর্ডে। নিজের হাতে চক দিয়ে বড় বড় করে নিজের নামটা লিখে সাক্ষর হলেন ভবানী দাস।শংসাপত্র পেয়ে খুবই খুশি। তার কথায়, ‘‘এখানেই থামব না। নামটা লিখতে পারলেই তো হবে না। নাতনিটার মতো গড় গড় করে বই পড়াটাও শিখে ফেলতে হবে।’’ এ দিনই সাক্ষর হয়েছেন চল্লিশের কোঠার ঝুমা সরকারও। ঝুমা বলছেন, ‘‘মেয়ে স্নাতক স্তরে পড়ে। আমিও নামটা লিখতে শিখলাম।’’ভবানীদেবীর বড় ছেলে যতনবাবু বলছেন, ‘‘মায়ের সঙ্গে দেখা করে প্রণাম করে আসব।’’