জল ঠেলে। বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
দিনভর টিপটাপ বৃষ্টি লেগেই ছিল। কখনও খানিক জোরে, কখনও একটু আস্তে। যদিও হঠাৎই বদলে গেল ছবিটা। দমকা হাওয়ার সঙ্গে অঝোরে বৃষ্টি। জলমগ্ন হয়ে পড়ে বহরমপুরের অধিকাংশ এলাকা।
কোনও কোনও ওয়ার্ডের পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় হয়ে ওঠে, যে নিকাশিনালার নোংরা-জল নর্দমা উপচে ঢুকে পড়ে বাড়ির অন্দরমহলে। ভাগীরথীর পাড় বরাবর বস্তি এলাকার পরিস্থিতিও ভয়াবহ। বৃষ্টির জমা জল নামতে সময় লেগে যায় বেশ কয়েক ঘণ্টা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর জন্য পুরসভাই দায়ী। নিকাশি ব্যবস্থা ভাল না হওয়ার জন্য একটু বৃষ্টিতেই এই হাল শহরের।
বহরমপুরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীরাম শিরোমণি রোড, বর্ষার সময়ে শুধু নয়, বছরের যে কোনও সময়ে সামান্য বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে থাকে। সেখানে বুধবার বহরমপুরে বৃষ্টি হয়েছে ২৭.৪ মিলিমিটার। বাড়ির নীচের তলায়, গ্যারেজে, সিঁড়ি ঘরে জল থইথই। সতিমার মোড় থেকে দুর্গামন্দির পর্যন্ত রাস্তা জলে ডুবে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘‘এলাকায় একের পর এক পুরনো বাড়ি ভেঙে বহুতল আবাসন গড়ে উঠেছে, কিন্তু সেই তুলনায় নিকাশি নালার সংস্কার হয়নি। তাই বৃষ্টির জল দাঁড়িয়ে থাকছে এ ভাবে।’’
ওই একই সমস্যায় জেরবার গির্জার মোড়, ইন্দ্রপ্রস্থ, খাগড়া, কাশিমবাজার ও সৈয়দাবাদ এলাকার বাসিন্দারা। ওই সব এলাকার অলিগলিতে জলে জমে। দুর্ভোগের মুখে পড়তে হচ্ছে নাগরিকদের। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিরুপমাদেবী রোডে হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে যায়। এই এলাকারই এক বাসিন্দা কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে এক তলা বাড়ি সাড়ে তিন ফুট উঁচু করার বরাত দিয়েছেন বেসরকারি একটি সংস্থাকে। সে নিয়ে সম্প্রতি খবরও হয় সংবাদমাধ্যমে।
বহরমপুরের উপ-প্রধান কংগ্রেসের মইনুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘‘বহরমপুর পুরসভা এলাকার জলনিকাশি ব্যবস্থা উন্নত মানের হলেও যে ৬টি নালা দিয়ে শহরের জল বাইরে বেরিয়ে যায়, তা রয়েছে সেচ দফতরের অধীনে। এখন সেচ দফতর ওই নিকাশি নালা সংস্কারের কাজ করছে। ফলে ভবিষ্যতে হয়তো এই দুর্ভোগের হাত থেকে মুক্তি মিলবে।’’
দিনভর ঘ্যানঘেনে বৃষ্টিতে বহরমপুরের বেশ কয়েকটি বাজারে বেচাকেনা হয়নি বললেই চলে। জল-কাদা মাড়িয়ে বাজার করার তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হননি। পুর-নাগরিকদের অনেকেই হেঁশেলে হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে উনুনে
চাপিয়েছেন খিচুড়ি।
এ দিকে, একটানা বৃষ্টিতে বহরমপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় দফায় দফায় লোডশেডিং হয়। বুধবার রাতে বানজেটিয়া, স্বর্ণময়ী ও বহরমপুর লাগোয়া মানকরা এলাকায় বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি না হলেও গাছ ভেঙে পড়ে। স্বর্ণময়ী এলাকায় গাছ ভেঙে পড়ার ফলে দীর্ঘক্ষণ ওই এলাকা অন্ধকারে ডুবে ছিল। প্রায় চার ঘণ্টা সময় লাগে গাছ সরাতে।
বিদ্যুৎ দফতরের বহরমপুরের ডিভিশন্যাল ইঞ্জিনিয়ার সুকান্ত মণ্ডল জানান, বৃষ্টির সঙ্গে ঝড় না হলেও বহরমপুরের বিভিন্ন জায়গায় গাছ ভেঙে পড়েছে। ফলে বেশ কয়েকটি জায়গায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যায়। তার জন্যই লোডশেডিং।