পোস্টার। নিজস্ব চিত্র
জেলা তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদল নিয়ে আকচাআকচি নতুন ঘটনা নয়। রানিনগর থেকে ভগবানগোলা, ইসলামপুর কিংবা ফরাক্কায়— কোথাও দলের একাংশের ক্ষোভ, কোথাও নেতাকে ধরে হেনস্থা, তৃণমূলের কোন্দলের বিরাম নেই। সেই তালিকায় এ বার নয়া সংযোজন, ভোট কুশলী পিকে’র বিরুদ্ধে রোষ উগরে দেওয়া। দেওয়াল জুড়ে স্পষ্ট হরফে সোমবার তাই পোস্টার পড়ল— পিকে’র জেলা সমন্বয়কারীকে জেলা থেকে সরাতে হবে কিংবা আইপ্যাকে কাজ দেওয়ার নাম করে ব্লকে টাকা তোলা হচ্ছে কেন, পিকে জবাব দাও!
সোমবার ভোরে বহরমপুর শহর লাগোয়া ভাকুড়িতে নজরুল ইসলামের মূর্তির সামনে পিকের বিরুদ্ধাচারণ করে এমনই অজস্র পোস্টার পড়েছে। যদিও শাসকদলের নেতা তা দলের কোন্দলের টাটকা উদাহরণ বলে মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, এ কাজ বিরোধীদের।
তৃণমূলের জেলা ও ব্লকস্তরে নেতাদের রদবদল আসন্ন। শুরু হয়েছে। মাস খানেক আগে সৌমিক হোসেন, অরিত মজুমদার, খলিলউর রহমান ও অশোক দাসকে দলের জেলা কো-অর্ডিনেটর করা হয়েছে। সঙ্গে্ রয়েছেন জেলা সভাপতি রয়েছেন আবু তাহের খান, দলের চেয়ারম্যান রয়েছেন সুব্রত সাহা। তাঁরা ব্লক ও জেলা কমিটির সাংগঠনিক রদবদল নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করছেন। তবে, সে আলোচনার ফল এখনও প্রকাশ পায়নি। বিরোধীরা বলছেন, ‘ফল বেরোলে কোন্দল একেবারে হাতাহাতির চেহারা নেবে বলেই প্রকাশ করতে দেরি করছে তৃণমূল। দলের অন্দরের খবর, পদ হারানোর আশঙ্কায় দলের মেজ-সেজ নেতাদের একাংশই এ সব করেছেন। দিন কয়েক আগে ভগবানগোলায় দলের একাংশ যেমন রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে, ইসলামপুরে যেমন রাস্তায় নেমেছে সৌমিকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল, ফরাক্কা শুনেছিল সাংসদ খলিলুলের বিরুদ্ধে ‘ঘোঁট’ করার নালিশ— এ কাজ তেমনই কোনও মেজ নেতার বলে মনে করছেন জেলা নেতাদের একাংশ। প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও জেলার এক তাবড় নেতা বলছেন, ‘‘এই আকচাআকচি না থাকলে আর তৃণমূল হবে কী করে! এ কাজ দলেরই কেউ করেছে বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে, তারা বুঝতে পারছে না এতে দলের তো বটেই সঙ্গে তার নিজেরও ক্ষতি।’’
এ দিন ভাকুড়ির পোস্টারে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের দলের লোকজন ও তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটরদের বিরুদ্ধে সরাসরি তোলবাজির অভিযোগ তোলা হয়েছে। পোস্টারের বয়ানে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে পদ খোয়ানোর আশঙ্কায় এখন থেকেই পাল্টা ‘প্রচার’ শুরু করেছেন সেই বিক্ষুব্ধরা। আইপ্যাকের জেলা সমন্বয়কারিকে জেলা থেকে সরানোর দাবি তোলা হয়েছে। আবার রাখা হয়েছে প্রশ্ন— ‘কো-অর্ডিনেটর করা মানে কি? তোলাবাজির ছাড়পত্র দেওয়া ছাড়া আবার কী!’’ আদি তৃণমূলকংগ্রেস বৃন্দের নাম দিয়ে এ সব পোস্টার দেওয়া হয়েছে।
আবু তাহের দাবি করেছেন, ‘‘দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে বিরোধীরা এ সব নোংরামি করছে।’’ একই সুরে জেলা কো-অর্ডিনেটরদের অন্যতম অরিত মজুমদার বলেন, ‘‘এটা সিপিএম-কংগ্রেসের ষড়যন্ত্র। আমাদের দলের ভিতরে ছদ্মবেশে থাকা কিছু লোক ওদের হাতে তামাক খেয়ে তাদের সঙ্গে সামিল হয়েছে। ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দল থেকে ওদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে।’’ দলের অন্য দুই কো-অর্ডিনেটরও বিরোধীদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে হাত ধুয়েছেন। কংগ্রেসের এক জেলা নেতা বলছেন, ‘‘বাম-কংগ্রেসের এজেন্টরাই যদি এ কাজ করে থাকে, তবে তাদের দলে টানতে এত মরিয়া কেন বাপু!’’