প্রতীকী ছবি।
গত বৃহস্পতিবার থেকেই ক্যালেন্ডারের বরাত নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন স্বপন ভৌমিক।
ইতিমধ্যে খান তিরিশেক দোকানের কাজ ধরে ফেলেছেন। এর বেশি বরাত নিলে সময় মতো ডেলিভারি দিতে পারবেন না। হাতে মাত্র দু’টি সপ্তাহ। নববর্ষের ক্যালেন্ডারের অর্ডার নেওয়া এবারের মতো বন্ধ করে দিলেন মাজদিয়ার স্বপন ভৌমিক।
ছবিটা কম-বেশি একই রকম নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর বা রানাঘাটেও। পাক্কা দু’বছর পর পয়লা বৈশাখ ঘিরে সেই পুরনো ব্যস্ততা ফিরছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
২০১৯ সালের এপ্রিলে শেষ বার পয়লা বৈশাখে হালখাতার উৎসব হয়েছিল। ২০২০ সালে কড়া লকডাউনে নববর্ষ পালনের কোনও প্রশ্নই ছিল না। গত বছরেও এই সময়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে জারি ছিল বিধিনিষেধ। সেই অর্থে এ বার আর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। ১ এপ্রিল থেকে দেশে করোনা সংক্রান্ত জারি করা যাবতীয় বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। যদিও দূরত্ববিধি বজায় রাখা এবং মাস্ক ররতে হবে। এই পরিস্থিতিতে প্রবল ভাবেই নববর্ষ পালনের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
নববর্ষের প্রস্তুতির আগাম আভাস পাওয়া যাচ্ছে ক্যালেন্ডার অর্ডারের বহর দেখেই। শহর কিংবা গ্রামাঞ্চল সব জায়গাতেই প্রেসের মালিকদের মাথাব্যথার কারণ এখন বাংলা বছরের ক্যালেন্ডার। তাঁরা জানাচ্ছেন, পর পর দুই বছর হালখাতা করতে না পারার আক্ষেপ মিটিয়ে নিতে ইতিমধ্যেই নেমে পড়েছেন দোকান মালিকেরা। কৃষ্ণনগরের বিশ্বজিৎ সিংহ রায় বলেন, “এবারে নববর্ষের বাজার যে ভাল হবে, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। কাজের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। গত দুই বছর হালখাতা করতেই পারেননি ব্যবসায়ীরা। তবে এ বার সমস্যা কাগজ এবং ক্যালেন্ডারের জোগানে।”
জেলায় যাঁরা ক্যালেন্ডারের কাজ করেন, তাঁরা জানাচ্ছেন গত দুই বছরে এই ব্যবসা প্রবল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কলকাতায় যাঁরা ক্যালেন্ডারের উৎপাদক, তাঁরা অনেক কম ক্যালেন্ডার তৈরি করেছেন। বাজারের চাহিদা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। দামও বেড়েছে।
মাজদিয়ার স্বপন ভৌমিক বলেন, “আমার কাছে ৩০টা দোকানের ক্যালেন্ডারের অর্ডার এসেছে। এর পর নিলে আর সামলাতে পারব না। তাই বন্ধ করে দিলাম। করোনার জন্য প্রেসে কর্মী নেই। বাড়ির সবাই মিলে কাজ তুলতে হবে। তবে এ বার নববর্ষের এই চাপ প্রমাণ করছে যে গ্রাম-শহর সবই পুরনো ছন্দে ফিরছে।”
নবদ্বীপের শ্যামল দে ২০১৯ সালে মোট ৮৬টি প্রতিষ্ঠানের ক্যালেন্ডার করেছিলেন। পরের দুই বছর কাজ ছিল না। তিনি বলেন, “এ বার সব মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশটি কাজের কথা হয়েছে। শুধু শহর নয়, সংলগ্ন গ্রাম থেকেও কাজের বরাত আসছে। এটাই আশার কথা।”
তবে এ বার বেড়েছে ক্যালেন্ডারের দামও। বিভিন্ন সাইজের সাধারণ ক্যালেন্ডার এবং পাঁজি ক্যালেন্ডারের দাম প্রতি শ’য়ে ৪-৮ টাকা পর্যন্ত চড়েছে। আলঙ্কারিক ক্যালেন্ডারের দাম আরও বেশি। কৃষ্ণনগরের বিশ্বজিৎ সিংহ রায় বলেন, “প্রতি পিস ৬ টাকা থেকে শুরু। আবার, এক পিস ক্যালেন্ডারের দাম ৬০-৬৫ টাকা এমনও আছে। তবে আমাদের দিকে মাঝারি দামের ক্যালেন্ডারের চাহিদাই বেশি। ঊর্ধ্বে ৩০-৩৫ টাকা।” যদিও প্রতি দিনের জীবনে বাংলা নববর্ষের ক্যালেন্ডারের সেই রমরমা আর নেই। বিয়ে-পৈতে-অন্নপ্রাশনের মতো অনুষ্ঠান এবং স্বল্প কিছু কিছু ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্র ছাড়া বাংলা তারিখ এখন ব্রাত্য। নির্ভরতা কমছে, তাই গুরুত্ব হারিয়েছে নববর্ষের ক্যালেন্ডার। তবু পয়লা বৈশাখের রাতে দোকান থেকে দেওয়া মিষ্টির প্যাকেটের সঙ্গে পাকানো ক্যালেন্ডারের টান এখনও অনস্বীকার্য।