ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় বাজেটে ফের তামাকজাত সামগ্রীর উপর কর বসানোর কথা ঘোষণা করায় গভীর সঙ্কটে বিড়ি শিল্প। যার সরাসরি ফল ভুগতে হবে বিড়ি শ্রমিকদের। জঙ্গিপুরের সাংসদ তৃণমূলের খলিলুর রহমান সে কথাই রবিবার পের মনে করিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “জিএসটি’র ধাক্কায় এমনিতেই বিড়ি শিল্পে অচলাবস্থা চলছে। তার উপর এ বারে বাজেটে তামাকের উপর আরও ১০ শতাংশ বাড়তি কর বসানোর প্রস্তাব দেওয়ায় দাম বাড়বে বিড়ির। ফলে বিড়ির বিক্রি কমবে। এবং পরিণতিতে শ্রমিকেরা কাজ হারাবে।’’ এ ব্যাপারে তিনি আন্দোলনে নামার ডাক দিলেন বিড়ি মালিকদের, প্রয়োজনে শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়েই আন্দোলন করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তাঁর অভিযোগ, “জঙ্গিপুর মহকুমায় বিড়ি বাস্তবে কুটির শিল্প। বিড়ির সঙ্গে তামাক জাতীয় অন্য বৃহৎ শিল্পের তুলনা করা সঙ্গত নয়। কেন্দ্রীয় সরকার বিড়ি বিক্রির উপর ২৮ শতাংশ জিএসটি বসানোয় শ্রমিকদের প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ কমে গেছে। তামাকে কর বসলে ভবিষ্যতে কাজ হারানোর আশঙ্কা বাড়বে জঙ্গিপুরের ৭ লক্ষ বিড়ি শ্রমিকের। তাই বিড়ি শিল্পকে বাঁচানোর কথা চিন্তা ভাবনা করতে হবে শ্রমিক নেতাদেরও।”
অরঙ্গাবাদ বিড়ি মালিক সংগঠনের সম্পাদক রাজকুমার জৈন বলেন, “এখনও স্পষ্ট নয় তামাকের দাম বৃদ্ধির ফলে ঠিক কত বাড়বে বিড়ির দাম। কারণ বিড়ি, সিগারেটে আকারের তারতম্য অনুযায়ী মূল্য বৃদ্ধি ঘটে। তবে যাই কর বসুক, তা শিল্পের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়। আমরা এ নিয়ে আলোচনায় বসব। ’’
সিটুর জেলা সভাপতি জ্যোতিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় একই সুরে বলেন, ‘‘বিড়ি শিল্পের এই সঙ্কট নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি বিড়ি শ্রমিক সংগঠনের জেলা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় ১২ লক্ষ বিড়ি শ্রমিক রয়েছেন। সকলেই অদক্ষ। কাজ হারালে তাঁদের সামনে কোনও বিকল্প কর্মসংস্থান নেই। এমনিতেই বিড়ি শ্রমিকেরা সরকারি ন্যুনতম মজুরি হাতে পান না। চড়া জিএসটির ফলে বিড়ির বিক্রি কমেছে। এখন শ্রমিকেরা কাজ পাচ্ছেন সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন। প্রাপ্য মজুরি ১৫২ টাকাও দেওয়া হয় না বহু এলাকায় শ্রমিকদের।’’ তার অভিযোগ, ‘‘বিড়ি শিল্পে জঙ্গিপুর থেকেই জিএসটি আদায় হয় দেড় হাজার কোটি টাকা। এর অর্ধেক পায় রাজ্য, বাকি অংশে বাগ বসায় কেন্দ্র। অথচ বিড়ি শ্রমিকদের নিয়ে কোনও ভাবনাচিনাত নেই কোনও পক্ষেরই। নেই বিকল্প কর্ম সংস্থানের চিন্তা।”
জঙ্গিপুরের বিড়ি শ্রমিক রিমা বিবি বলছেন, “রবিবারই মুন্সি (ঠিকাদার) বলে দিয়েছে তামাকের দাম বেড়েছে। তাই কাজ আরও কমবে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে প্রতি হাজার বিড়িতে ২৬ টাকা মজুরি বেড়েছে। সকলেই খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু দু-চার মাস যেতে না যেতেই ৭ দিনের কাজ অর্ধেকে নেমে গেল। বিড়ির দাম বাড়লে কাজ আরও কমে গেলে কি খাব আমরা!’’