অভিযান: বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
শর্ত একটাই, বিক্রিবাটা শেষে ব্যারাক স্কোয়ারের সবুজ ঘাসে যেন লুটোপুটি না খায় শালপাতা-কফির তোবড়ানো কাপ।
পরিষ্কার রাখার শর্তে মাস কয়েক জুড়ে ছাড়পত্র মিলেছে চা-কফি, বাদাম-শশা, মশলা-মুড়ির।
দিনভর বিক্রিবাটার শেষে রাতে তাই জনা পঁয়ত্রিশ হকার কোমর বেঁধে নামছেন মাঠ পরিস্কারে।
পলাশির যুদ্ধের দশ বছর পর ১৭৬৭ সালে বহরমপুরে নবাব মির জাফরের দান করা ৪০০ বিঘা জমির উপর ইংরেজদের সেনা নিবাস গড়ে উঠেছিল। ব্যারাক স্কোয়ার মাঠের চারপাশের সেই সেনা নিবাস এখন প্রশাসনিক ভবন, আদালত আর সরকারি বাড়ির ছায়ায় ঢাকা পড়েছে। মাঝে পড়ে রয়েছে নিঃসঙ্গ সবুজ ব্যারাক স্কোয়ার।
বিশাল মাঠের চার দিকে রয়েছে আড়াইশো বছরের প্রাচীন খান কয়েক রেন ট্রি। বহরমপুর পুরসভা ওই মাঠের চারপাশে আলো আর ফুলের বাগান করেছে। মাঠের চার কোণে বসেছে চারটি হাইমাস্ট আলো। পুরসভার ব্যবস্থাপনায় সকাল-সন্ধ্যা মাঠের চারপাশে বাজছে গান।
বিস্তৃত মাঠের সকাল-সন্ধ্যা বহরমপুরের মানুষজনের নিরুপদ্রব অবসর। প্রতি দিন অফিস-আদালত বা অন্য কাজে বহরমপুরে আসা কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নেন ব্যারাক স্কোয়ারের রেন ট্রির ছায়ায়। তাঁদের কাছে চা, কফি, বাদাম, শশা, মশলা-মুড়ি, চিঁড়েভাজা, ডালমুট—মাঠ জমে পাতা-কাপের স্তূপ। মাঠে হকারদের বিক্রিতে কোপ পড়েছিল তার জেরেই। মহকুমাশাসকের নির্দেশে সিভিক পুলিশ গত ডিসেম্বর থেকে হকারদের মাঠে নামতে আর দিচ্ছে না। জীবিকা খুইয়ে তাঁরা বহরমপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান জয়ন্ত প্রামানিকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘অতিরিক্ত জেলাশাসক ও মহকুমাশাসকের সঙ্গে বৈঠকে ঠিক হয়, তাঁরা মাঠ পরিস্কার রাখলে চা, কফি, মশলা-মুড়ি বিক্রির ছাড়পত্র মিলবে।’’ গড়া হয় ‘স্কোয়ার ফিল্ড হকার কমিটি’। কমিটির সহ-সম্পাদক কালীদাস বিশ্বাস বলেন, ‘‘গত ২ জানুয়ারি থেকে সারা দিন ব্যবসা করার পর রাত নটায় আমরা সবাই মিলে মাঠ পরিস্কার করি। তাতে আমাদের জীবিকাও টিঁকেছে, মাঠও পরিস্কার থাকছে।’’