কাজ নেই, তাই ভিন দেশে পরিযায়ী ওঁরা

বাহালনগরের বেহাল রাস্তা, ধুলো ঢাকা পথ ঘাট। অপরিসর গলি, এলোমেলো বাড়ি। বুধবার সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাশ্মীরের কথা বলছিলেন দুলাল শেখ— ‘‘এই তো গ্রামের চেহারা। দেখেই বুঝতে পারছেন, তেমন বর্ধিষ্ণু নয়। মানুষ আয়ের খোঁজে বাইরে যাবে না বলুন!’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

বাহালনগর শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৯ ০২:১৯
Share:

হাঁড়ি চড়েনি বাহালনগরে।

হেমন্ত চুপিসারে শীত বয়ে এনেছে। বেলা গড়াতেই ঝাঁপ পড়ে যায় গ্রামীণ দোকানের। বটতলার মাচার আড্ডায় ভিড়টা পাতলা হয়ে আসে। একে একে নিভে যায় আলো।

Advertisement

তেমনই নিভু আলোয় মঙ্গলবার রাতে একটা পুলিশের গাড়ি এসে থেমেছিল বাহালনগর গ্রামে। কামরুদ্দিন শেখের বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই জানলা খুলে গিয়েছিল—
কে গা?

পুলিশ দেখে থতমত, একে একে বেরিয়ে এসেছিলেন গ্রামবাসীরা। একটা ঘুমিয়ে পড়া গ্রাম ফের জেগে উঠেছিল। সেই ঘুম রাতভর আসেনি আর।

Advertisement

বাহালনগরের বেহাল রাস্তা, ধুলো ঢাকা পথ ঘাট। অপরিসর গলি, এলোমেলো বাড়ি। বুধবার সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাশ্মীরের কথা বলছিলেন দুলাল শেখ— ‘‘এই তো গ্রামের চেহারা। দেখেই বুঝতে পারছেন, তেমন বর্ধিষ্ণু নয়। মানুষ আয়ের খোঁজে বাইরে যাবে না বলুন!’’

সেই খোঁজই কাশ্মীর টেনে নিয়ে গিয়েছিল নিহত পাঁচ জনকে। ওঁরা একা নন, সঙ্গে আরও অনেকেই ছিলেন। দুলাল বলছেন, ‘‘এ বার না হয় আমি যাইনি। কিন্তু গত বারও তো গিয়েছি। এমন তো আমারও হতে পারত!’’ তাঁর কথার সুর ধরেই মনসুর আলি বলছেন, ‘‘এক-দেড় কাঠা জমিতে আবাদ। ধান পোঁতার পরে দুটো মাস বসে থাকা যায়? তাই তো গ্রামের অনেকেই ভিন দেশে পাড়ি দেয়। আমিও দিয়েছি। দু’পয়সা আয় করে ফিরেছি। এ ছাড়া উপায় কী!’’

গ্রামেরই মেয়ে সমিরুন খাতুন। বাংলায় অনার্স পাশ করে এমএ-র প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বলছেন, “দেখেছেন আজ সকাল থেকে গ্রামে কাদের পা পড়ল? তাঁরা যদি সময় মতো এসে গ্রাম আর গ্রামের মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতেন, তা হলে তো মানুষগুলোকে ভিন দেশে যেতে হয় না।’’ তাঁর ইঙ্গিত রাজনৈতিক নেতাদের দিকে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, গ্রামে ১০০ দিনের কাজ সবার জোটে না। সরকারি অন্য কোনও প্রকল্পেরও প্রচার নেই। নতুন প্রজন্ম স্কুলে যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু একটু বড় হলেই ছেলেরা চলে যাচ্ছে বাইরে কাজে, গ্রামের অনেকেই মেনে নিচ্ছেন আয়ের খোঁজেই স্কুল ছেড়ে আয়ের পথে নামতে প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় দিচ্ছে পরিবার।

ষাটোর্ধ মিলিবা বিবির স্বামী মেহের শেখের বয়স প্রায় ৭০ বছর। ঠিক মত চলাফেরাও করতে অসুবিধে হয়। মিলিবার কথায়, “খাব কি? জমি নেই, বিড়ি বাঁধার চল নেই এলাকায়। তাই অসুস্থ স্বামীকেও পাঠাতে হয়েছে কাজে। সরকার থেকে শুনি বার্ধক্য ভাতার কথা। কিন্তু দিচ্ছে কই?’’ অভাবের সংসারে তাই বাইরে কাজে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই বাহালনগরের।

বোখারা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শ্রাবণী দাস মানছেন গ্রামের দুরবস্থার কথা। বার্ধক্য ভাতা নিয়েও সমস্যা রয়েছে মানছেন তাও। তিনি বলেন, “এলাকায় কাজ নেই বলেই বাইরে যেতে হচ্ছে বাহালনগরের বেশির ভাগ মানুষকেই। গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতে কাজ কোথায় যে সবাইকে দেব?”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement