সম্প্রতি কালীগঞ্জে দেখা মিলেছে সাতটি শুশুক শাবকের। নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘ দিন পরে এলাকায় নতুন করে ৭টি শুশুক শাবকের দেখা পাওয়ায় খুশি পশুপ্রেমীরা। একটা সময়ে দেখা মিলত শুশুকের। গঙ্গার বুকে মাঝেমধ্যেই উঁকি মারত গাঙ্গেয় ডলফিন। অথচ, দিনে দিনে তাদের সংখ্যা কমছে। স্বাভাবিক ভাবেই যা নিয়ে চিন্তিত পরিবেশপ্রেমী মানুষ এবং বনদফতর। এর মধ্যেই নতুন করে এলাকায় আবার শুশুকের দেখা মেলায় খুশি কালীগঞ্জের মানুষ।
নদিয়ার কালীগঞ্জ ব্লকের বল্লভপাড়ার ভাগীরথীতে আগে হামেশাই চোখে পড়ত গাঙ্গেয় ডলফিন। নৌকায় নদীপথ পার হতে গিয়ে অনেকেই দেখে ফেলেছেন শুশুক প্রজাতির প্রাণীটিকে। ঘোর বাদামি বা কালো রঙের এই প্রাণীটি গঙ্গার মিঠে জলে ঘুরে বেরাতো। তবে গত বেশ কয়েক বছর ধরে এদের দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না সে ভাবে। সম্প্রতি ফের এলাকায় নতুন করে গাঙ্গেয় ডলফিনের দেখা মিলেছে।
এক শুশুক-প্রেমীর কথায়, ‘‘আগের মতো অতটা না হলেও দিনে এক-আধ বার দেখা মিলছে শুশুকের।’’ তবে তিনি মনে করাতে ভোলেননি, বনদফতের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা জরুরি। যেন কোনও ভাবে ওই গাঙ্গেয় ডলফিন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
স্থানীয় এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে গাঙ্গেয় ডলফিন বা শুশুক বাঁচানোর জন্য কাজ করে আসছেন গণেশ চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘২০১০ সালের পর থেকে ভাগীরথীতে শুশুকের সংখ্যা অত্যন্ত কমে গিয়েছে। এর কারণ, নদীর চরম দূষণ এবং অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরা।’’ তিনি আরও জানাচ্ছেন, চোরাশিকারিদের অবাধ বিচরণ এবং যত্রতত্র অনিয়ন্ত্রিত বাঁধ তৈরির কারণে শুশুকের সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে কমছে। ব্যাহত হচ্ছে তাদের প্রজনন প্রক্রিয়া এবং বংশবৃদ্ধি। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েক বছরের মধ্যে জন্মহারের চেয়ে শুশুকের মৃত্যুহার অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।’’
জানা গিয়েছে, নয়াচর, কালিকাপুর ও ফুলবাগান এই চর এলাকার মধ্যে বর্তমানে আনুমানিক ৩১টি শুশুক তাদের শাবক নিয়ে রয়েছে। গণেশের অনুরোধ, ‘‘বর্তমানে এরা খুবই সঙ্কটে আছে। এদের ক্ষতি না করে বাঁচিয়ে রাখুন।’’
এই বিষয়ে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার ডিএফও প্রদীপ বাউরি বলেন, ‘‘খুশির খবর যে, শুশুকের শাবক হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে সচেতন এবং নিয়মিত ওদের প্রতি নজর রাখি। মৎস্যজীবীদের কাছে আবেদন, তাঁদের জালে শুশুক ধরা পড়লে যেন তাঁরা সেগুলিকে জলে ছেড়ে দেন।”