বিস্ফোরণে ভেঙে পড়া বাড়ি। চাপড়ার মহেশনগরে। —নিজস্ব চিত্র।
বোমার আঘাতেই চাপড়ার মহেশনগরে বাড়ি ধসেছিল বলে জানাল ফরেনসিক রিপোর্ট। ধৃত বাড়ির মালিককে জেরা করে সোমবার রাতে ওই গ্রাম থেকেই বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
দিন কয়েক আগে প্রবল শব্দে বাড়ির একাংশ ধসে যাওয়ার পরে পুলিশ প্রথমে দাবি করেছিল, দুর্বল গাঁথনির কারণে দেওয়াল ভেঙে পড়েছে। পরে তদন্তে বোমা বিস্ফোরণের সম্ভাবনা উঠে আসতে থাকায় পুলিশ বাড়ির মালিক সাইফুল শেখকে বিস্ফোরক আইনে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মতিন শেখের আত্মীয় সাইফুলকে হেফাজতে নেওয়ার পর তাকে জেরা করে জানা যায়, মহেশনগরেরই একটা ইটভাটার পাশে এবাদত শেখের কাঁঠালবাগানে ঝোপের ভিতরে বেশ কিছু বোমা লুকিয়ে রাখা হয়েছে। সোমবার রাতে সাইফুলকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ সেখানে হানা দেয়। তারই দেখিয়ে দেওয়া জায়গা থেকেই ন’টি তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বম্ব স্কোয়াডের লোকজন সেগুলি নিষ্ক্রিয় করে।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের দাবি, সাইফুল প্রথম দিকে বিশেষ মুখ খুলছিল না। তার বাড়িতে য়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে, তাও সে স্বীকার করতে চাইছিল না। কিন্তু ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর পুলিশ তাকে চেপে ধরে। জেরার মুখে সে পুরো বিষয়টি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। আর কোথায় বোমা লুকিয়ে রাখা হয়েছে, সেটাও জানিয়ে দেয়। তার কাছ থেকে আরও বেশ তথ্য পাওয়া যাবে বলে পুলিশ মনে করছে।
পুলিশের দাবি: জেরায় সাইফুল জানিয়েছে, নিজের বাড়ির রান্নাঘরে বোমা মজুত রেখেছিল সে। ওই রাতে তা-ই ফেটে যায়। দেওয়াল ও ছাদ ধসে যায়। বোমা বাঁধার জন্যই সুতলিও মজুত করে রাখা হয়েছিল। ধ্বংসস্তুপের ভিতরেই বিস্ফোরণের চিহ্ন ও নমুনা ঢাকা পড়ে গিয়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ বা বম্ব স্কোয়াড বিস্ফোরণের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি বলে কর্তাদের দাবি।
গ্রামবাসীর একাংশের অভিযোগ, সাইফুল নিমিত্ত মাত্র। আসলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মতিন শেখই তাকে দিয়ে বোমা মজুত করাচ্ছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মতিন দাবি করেন, “সাইফুল আমার পাড়াতুতো ভাগ্নে। ও কোথায় কী করছে, আমি কিছুই জানি না। আমি এখন গ্রামেই থাকি না।”
বিস্ফোরণের রাতে, এমনকি পরের দিনও চাপড়ার তৃণমূল বিধায়ক রুকবানুর রহমান দাবি করেছিলেন, দুর্বল গাঁথনির কারণেই বাড়ি ধসেছে। মতিন শেখ তাঁরই ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এ দিন তিনি বলেন, “তখন প্রাথমিক ভাবে যা জানা গিয়েছিল, তা-ই বলেছিলাম। এখন তদন্তে যা উঠে আসছে পুলিশ তার ভিত্তিতে তদন্ত করুক, আমরা সেটাই চাই।”