বন্্ধের সমর্থনে কংগ্রেসের মিছিল। বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র
সহমত ছিল দু’দলেরই, বিরোধিতার প্রশ্নেও ছিল না দ্বিমত। এনআরসি এবং নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল— ত্রিপক্ষের সেই আপাত কাছাকাছি আসার প্রশ্ন আচমকাই ধাক্কা খেয়েছে বাম-কংগ্রেস বনধের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিতে। বনধের রাজনীতিতে আস্থা নেই জানিয়ে দিয়ে তৃণমূল বেঁকে বসায় আজ, বুধবার রাজ্য জুড়ে সেই বনধের আবহে সঙ্ঘর্ষের মেঘ জমছে বলে মনে করছে পুলিশ-প্রশাসন।
মঙ্গলবার রাজ্য সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে— রাজ্যে বনধ হতে দেবে না তারা। আগেও ববনধের বিরোধিতা করে শাসকদল তৃণমূলকে রাস্তায় নামতে দেখা গিয়েছে। এ বারেও কি সে ছবিই অপেক্ষা করছে?
এনআরসি কিংবা নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাজ্যে সব থেকে তপ্ত হয়েছিল যে জেলা সেই মুর্শিদাবাদ নিয়ে তাই বাড়তি মাথা ব্যাথা রয়েছে নবান্ন তথা জেলা প্রশাসনের।
বনধে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের জেলাশাসকের দফতরে বাস মালিক সংগঠন, আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক, এবং পুলিশকে নিয়ে বৈঠক করেছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সিরাজ দানেশ্বর। এ দিন বিকেলে পরিবহণ-কর্তাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসন সেরে নিয়েছে আলাদা বৈঠক। প্রশাসনের পক্ষ থেক বাস মালিকদের স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে— রাস্তায় পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা থাকবে। বনধের দিন বাস চালাতে গিয়ে কোনও ক্ষতি হলে তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও থাকবে। তাই বাস চলাচলে কোনও খামতি যেন না থাকে। মুর্শিদাবাদের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক সিদ্ধার্থ রায় বলেন, ‘‘বাস মালিকদের বাস চালাতে বলা হয়েছে। বনধের জেরে বাসের কোনও ক্ষতি হলে তার ক্ষতিপূরণের সংস্থান করা হবে। বনধের দিন রাস্তায় অতিরিক্ত সরকারি বাসও চালানো হবে।’’ মুর্শিদাবাদ জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামল সাহা বলছেন, ‘‘পুলিশ প্রশাসন বুধবার নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে যখন তখন আমাদের বাস না চালিয়ে আর উপায় কোথায়!’’
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার অজিত সিং যাদব বলছেন, ‘‘জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাসস্ট্যান্ড, সরকারি অফিস আদালত চত্বরে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। বনধের দিনে জেলায় অতিরিক্ত নজরদারি রাখা হবে। কোনও ভয় নেই।’’
যা শুনে মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাসও শুনিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘এনআরসি, নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আমরা বনধে শামিল হয়েছি। এ বনধ অন্য বনধ। যাঁরা বনধের বিরোধিতা করবে বা স্বতস্ফূর্ত বনধ জোর করে ভাঙবে মনে রাখবেন, তাঁরা সাধারণ মানুষের কাছে মুখোশধারী হিসেবে প্রমাণিত হয়ে যাবেন।’’ সিটুর মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক তুষার দে পাল্টা জানিয়ে রাখছেন, ‘‘আমরা জেলা জুড়ে কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথভাবে বনধের সমর্থনে নানা কর্মসূচি নিয়েছি। বনধের দিন যাতে যৌথভাবে কর্মসূচি করা যায় তার জন্য কংগ্রেসকে বলব। দেখে নেবেন বনধ সফল হবে।’’
তাঁর প্রচ্ছন্ন হুঙ্কারে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান বলে রাখছেন— ‘‘কিছু রাজনৈতিক দল ঘোলা জলে মাছ ধরতে বনধ ডেকেছে। আমরা সেই কর্মনাশা বনধের বিরোধিতা করছি। জোর করে বনধ করার চেষ্টা করলে আমাদের কর্মীরা প্রতিহত করবেন।’’