Berhampore

হঠাৎ মৃত স্বামীর দেহ বাড়িতে আগলে রেখে ছেলেকে বিয়েতে রাজি করালেন প্রৌঢ়া

শোকের আবহে বিয়ে স্থগিত হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু তাপসবাবুর স্ত্রী-ই সেই সময় ছেলেকে বোঝান। শেষ পর্যন্ত বাবার দেহ বাড়িতে রেখেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে রাজি হয়েছেন তাপসবুর ছেলে তন্ময়।

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৩৩
Share:

বিয়ের দিনই মৃত্যু হয় পাত্রের বাবার। প্রতীকী চিত্র।

বছর কয়েক আগে ছেলে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছে। তখন থেকেই ধুমধাম করে ছেলের বিয়ে দেওয়ার কথা বলতেন বহরমপুরের ঘাটবন্দর এলাকার রাধাকৃষ্ণ খান লেনের বাসিন্দা তাপস সাহা (৬২)। গত মঙ্গলবার ছিল তাঁর ছেলের বিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছেলের বিয়ে দেখে যেতে পারেননি তিনি।

Advertisement

পরিবারের লোকজন জানান, ওইদিন ভোরে ছেলের বিয়ের কিছু আচার-অনুষ্ঠান নিজেই করেন তাপসবাবু। পরে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শোকের আবহে বিয়ে স্থগিত হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু তাপসবাবুর স্ত্রী-ই সেই সময় ছেলেকে বোঝান। শেষ পর্যন্ত বাবার দেহ বাড়িতে রেখেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে রাজি হয়েছেন তাপসবুর ছেলে তন্ময়।

তাপসবাবুর স্ত্রী কবরীদেবী বৃহস্পতিবার চোখের জল মুছে বললেন, ‘‘অনেক দিন ধরে বিয়ের প্রস্তুতি চলেছে। তখন থেকেই আমার স্বামী বলতেন, ছেলের বিয়ে জাঁকজমক করে করতে হবে। যেন সকলের মনে থাকে। ১৭ জানুয়ারি বিয়ের দিন স্থির হয়। ১৯ জানুয়ারি বৌভাত। অনুষ্ঠান বাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। আইবুড়ো ভাতের দিনও বাড়ির লোকজনের সঙ্গে হাঁসিঠাট্টা করেছেন উনি। মঙ্গলবার ভোরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই সব শেষ।’’

Advertisement

এ দিকে, বাড়িতে এমন শোকের আবহে পরিচিতদের কেউ কেউ বিয়ে স্থগিত রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু সদ্যপ্রয়াত স্বামী নিজে হাতে ছেলের বিয়ের সব তোড়জোড় করেছিলেন। তাঁর কথা ভেবেই ছেলেকে বিয়ে করার জন্যে বোঝান কবরী। শেষ পর্যন্ত কোনও আড়ম্বর ছাড়াই সিঁদুর দান হয়। বিনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তন্ময় সাহার কথায়, “বিয়ের সব আয়োজন বাবাই করেছিলেন। কিন্তু কিছুই তিনি দেখে যাতে পারলেন না। এই দুঃখ সারা জীবন বইতে হবে।’’ বৃহস্পতিবার ছিল বৌভাত। এ দিন ওই বাড়িতে উৎসবের বদলে শোকের আবহ। প্যান্ডেল খুলে ফেলা হয়েছে। গুটিকয়েক আত্মীয়র উপস্থিতিও খাঁ খাঁ করছে তাপসবাবুদের গোটা বাড়িটা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement