ফাইল চিত্র।
গোলাপ তুমি যে নামেই ডাকো...।
নামে কী কিছু এসে যায়?
আলবাত যায়। কারও নাম যদি হয় গোলবদন শেখ কিংবা গোলচেহারা বিবি, তা হলে যায় বইকি। সে নামে তাঁদের হাত হয়ত নেই। তবে দায়িত্ব একটা রয়ে য়ায়। বাকি জীবনটা সেই দায়টা কাঁধে নিয়েই তাঁদের চলাচল, কখনও হাসির ধাক্কায় কখনও আরও কিছু বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে দিয়ে।
তাই নামে কিছু এসে য়ায় বইকি।
গাঁ-গঞ্জ ঘুরলে এমনই সব লুকিয়ে থাকা বিচিত্র নাম-বাহার—পচা, দোয়াত, ফিল্ম, কুকুর (হ্যাঁ, কুকুর নামও আছে। শ্রী কুকুরচন্দ্র ...) ফড়িং, ভকু, খুঁড়ু...। তালিকা কত দীর্ঘ হতে পারে, যত ঘুরবেন ততো আপনার সামনে আসবে, বারে বারে, ঘুরে ফিরে।
বহরমপুরে চায়ের দোকানে ডোমকলে কর্মরত এক নির্মাণ সহায়ক হাসির ছলে জানিয়েছিলেন, সামাজিক সুরক্ষা সমীক্ষায় তালিকা তৈরির সময়ে নাম নথিভূক্ত করতে এসেছিলেন সোলেমন শেখ। তাঁর বড় ছেলের নাম ডিএম শেখ, মেজ ছেলে এসডিও শেখ। নাম শুনে নথিভুক্ত করা দূরে থাক, পঞ্চায়েত দফতরে দু-রাউন্ড বাড়তি চা এসে গেল। কেউ হাসলেন, কেউ তাঁর ঝুলি থেকে বের করলেন আরও কিছু মজার নাম কেউ বা টুপ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন, কারণ তাঁরও যে একটা অদ্ভুত ডাক নাম আছে, গেঁড়ে, ভাগ্যিস জানে না কেউ!
তা সোলেমানকে জেরার ঢঙে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘আর কোনও ছেলেপুলে নেই?’ চমক বাকি ছিল, সোলেমন হাঁক দেন, ‘কই রে বিডিও!’ বাপের ডাক শুনে গুটি গুটি পায়ে ঘরে ঢোকে ব্লক ডেভলপমেন্ট অফিসার নয়, সাকুল্যে সাড়ের চার ফুটের বিডিও!
‘কেন এমন নাম রাখলেন?’ সোলেমান কোনও রাখঢাক না রেখেই বলতে তাকে— ‘গরীব মানুষ বাবু। ছেলেরা তো ও সব হতে পারবে না কোনও দিন তাই নাম রেখে একটু হাঁকডাক করে মজা পাই আর কি!’ নিজের অপত্য সন্তানদের মধ্যেও মজা খোঁজেন বাপ-মায়েরা। জগৎ বড্ড রসিক হে।
অনেক সময় নাম রাখার পিছনের ইতিহাসও রয়েছে, কিছু করুণ কিছু বাস্তব। কান্দির খোশবাসপুরের বেজারর কথাই ধরা যাক। কেন বেজারি? জানা গেল, পর পর মেয়ে হওয়ার পরে আবার কন্য়া সন্তান। সংস্খারের অনুশাসনে বাপ-মায়ের মুখ বেজার। সেই থেকে মেয়ের নামও হয়ে গেল বেজারি।
তেমনই জেলার শেখ। কেন জেলার? হাড়হাভাতের লড়াইয়ে রক্ত বইয়ে ধড়পাকড়ের সময় জেলই যখন বরাদ্দ হল, স্ত্রী তখন অন্তঃসত্ত্বা। সাত মাস জেল খেটে ফিরে এসে দেখলেন ফুটফুটে ছেলে। জেলার সাহেবের মতোই তাগড়াই। হবিবুল থেকে সে দিনই ছেলের নাম জেলার করে দিলেন বাপ।
স্কুলে পড়ত পটল। পুরো নাম পটল শেখ। মাস্টারমশাই জিজ্ঞেস করেন, ‘হ্যাঁ-রে পটল তোর এমন নাম কে রেখেছিল!’ জানা গেল গপ্পটা, জন্মের সময়ে তার বাবা খেতে পটল তুলছিল। ছেলের জন্মের কথা জানতে পেরে পরি কি মরি করে হাসপাতালে ছুটে এসে জানলেন ছেলে হয়েছে। সটান নাম রেখে দিলেন পটল!
কান্দির এক গ্রামের দুই যমজ ভাইয়ের নাম ছিল— গুয়ে-গোবর ও বেঁকা-সোজা। ব্যাখ্যার তেমন দরকার নেই। তবে, এমনই কিছু আজগুবি অতি বাস্তবই হয়ত
উঠে আসবে।
একের পর এক সন্তান, প্রায় বাৎসরিক হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। নামকরণ? হ্যাঁ এমনও আছে, নভেম্বর ডিসেম্বর, জানুয়ারি.... বাস্তব বড্ড বাস্তব গো, মায়া নেই!