প্রতীকী চিত্র।
এক দিকে ভাইরাসের ভয়, অন্য দিকে মদের জন্য হাহাকার। এ চৈত্রমাসে সত্যিই সর্বনাশ মদ-অনুরাগীদের।
লকডাউনে বন্ধ থাকা মদের দোকান ফের কবে খুলবে, আপাতত সেই প্রশ্নের উত্তর সর্বত্র খুঁজে ফিরছেন মদ্যপ্রেমী সকলেই। অনেকে আবার হন্যে হয়ে চেষ্টা করছেন যেনতেন প্রকারেণ মদ জোগাড়ের। আর সেই সুযোগে কল্যাণী থেকে কালীগঞ্জ— সর্বত্রই দেদার কালোবাজারি শুরু হয়েছে মদের।
অভিযোগ, লকডাউনের মধ্যেই জেলার বিভিন্ন জায়গায় গজিয়ে উঠেছে বেআইনি মদের ঠেক। সেখানে গেলেই মিলছে দেশি ও সস্তার বিলিতি মদ। দাম দিতে হচ্ছে চড়া। হরিণঘাটার বাসিন্দা শুভদীপ সাহা যেমন জানাচ্ছেন, তাঁদের এলাকায় আগে মুষ্টিমেয় কয়েক জন সরকার অনুমোদিত কাউন্টার থেকে মদ এনে বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, আড়ালে আবডালে বহু লোক মদ বিক্রি করছেন। দরও হাঁকাচ্ছেন ইচ্ছামতো। সরকার অনুমোদিত দেশি মদ ৮৫ টাকায় মেলে। সেই মদই এখন লুকিয়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।
কল্যাণী শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক যুবক এই রকমই একটি ঠেকে সম্প্রতি গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রচুর খদ্দের ছিল। মদ বিক্রেতা জানিয়ে দিলেন, সকলকে মদ দেওয়া যাবে না। তখনই খদ্দেররা নিলামের মতো দাম হাঁকতে শুরু করলেন। শেষমেশ দেখা গেল, ৪০০ টাকার বিনিময়ে এক বোতল দেশি মদ বিক্রি হয়ে গেল। কম দামের হুইস্কির দামও উঠল দ্বিগুণ।’’ নাকাশিপাড়ার চ্যাঙা গ্রামের এক যুবক বলছেন, ‘‘কয়েক দিন আগে লুকিয়ে ৫২০ টাকা দামের একটি মদ কিনতে হয়েছে ১৪০০ টাকায়।’’
হরিণঘাটার এক মদের কাউন্টারের মালিক বলছেন, ‘‘কিছু দোকানদার দোকানের পিছনের দরজা দিয়ে ঠেকের মালিকদের মদ দিচ্ছেন। আবগারি দফতরের উচিত, সব কাউন্টারের স্টকের হিসেব রাখা। কাউন্টারের মদের সঙ্গে ভেজাল মদও বিক্রির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, অতিরিক্ত টাকার লোভে কেউ এটা করতেই পারেন।’’
এক মদ বিক্রেতা জানাচ্ছেন, গরুকে যে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় সেই মোটা সিরিঞ্জ অনেকে মদের বোতলের ছিপিতে ঢুকিয়ে অনেকটা মদ তুলে নেয়। তার পর সেখানে মেশানো হয় জল এবং কিছু মাদকদ্রব্য যাতে নেশা ভাল হয়। এই ধরনের মদ অত্যন্ত বিপজ্জনক। খেলে মৃত্যুও হতে পারে। আবগারি দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ভেজাল কারবারিরা মুনাফা লুটতে এই রকম বিষমদ নিজেরা বানিয়ে বা কিনে বোতলবন্দি করে বিক্রি করছেন কিনা, সে ব্যাপারে কোনও নজরদারি চলছে না। এ ব্যাপারে জানতে জেলার আবগারি দফতরের সুপার সৌরভ ভদ্রকে ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি।