Chapra

জুয়ায় বাধা দিয়ে জেলে, জমা নালিশ

হুমকির কথা জানিয়ে নিরাপত্তা ও  জুয়ার বোর্ড বন্ধ করার দাবি নিয়ে পুলিশ সুপারের কাছে প্রায় দেড়শো গ্রামবাসী আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তার পরেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। উল্টে অভিযোগকারীদের মধ্যে বেশি সক্রিয়  উৎপল পাল নামে এক যুবককে ডাকাতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৩৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাজারের ভিতরে রমরমিয়ে চলছে সাট্টা-জুয়ার বোর্ড। সেই ঠেক বন্ধ করতে গণস্বাক্ষর করে থানায় আবেদন করেছিলেন বেশ কিছু গ্রামবাসী। আর সেই ‘অপরাধে’ অভিযোগকারীদের মধ্যে অন্যতম সক্রিয় এক জনকে ডাকাতির মামলা দিয়ে গ্রেফতার করার অভিযোগ উঠল চাপড়া থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। সোমবারই গ্রামবাসীরা কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। গোটা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে বলে আশ্বস্ত করেছে জেলা পুলিশ।

Advertisement

চাপড়া থানা এলাকার সীমান্ত সংলগ্ন জনবহুল এলাকা বাগমারা-বহিরগাছি। দীর্ঘ দিন ধরে সেই গ্রামের বাজার এলাকায় সাট্টা, প্যাড, জুয়ার বোর্ড রমরমিয়ে চলছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদেক অভিযোগ, সম্প্রতি জুয়ার রমরমা ভীষণ বেড়েছে। অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। গত ১২ নভেম্বর গ্রামবাসীদের একাংশ লিখিত ভাবে বিষয়টি জানিয়ে জুয়া বন্ধ করার জন্য চাপড়া থানায় আবেদন করেন।

এর পরেই পরিস্থিতি জটিলতর হতে থাকে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, যারা সাট্টার বোর্ড চালায় তারা নানা ভাবে অভিযোগকারীদের হুমকি দিতে থাকে। থানায় আবেদনকারীদের অন্যতম মুরারী ঘোষের অভিযোগ, “জুয়ার বোর্ডের মালিক সুব্রত বৈরাগ্য স্থানীয় কিছু সমাজবিরোধীকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাড়িতে আসে। হুমকি দেয় যে জুয়ার বোর্ড বন্ধ করতে চাইলে আমাদের গাঁজা, কাশির সিরাপ ও বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র রাখার কেসে জেলে পচিয়ে মারব। সে দাবি করে, সরকার থানার ওসিকে যত টাকা বেতন দেয় তার থেকে তিন গুণ টাকা সে দেয়।” তাঁর আরও অভিযোগ, “ওরা আমাদের লরির চাকায় পিষে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে। ওদের দাবি, শাসক দলের নেতাদের সঙ্গেও ওদের যোগাযোগ আছে। তাই কেউ কিছুই করতে পারবে না।”

Advertisement

এই হুমকির কথা জানিয়ে নিরাপত্তা ও জুয়ার বোর্ড বন্ধ করার দাবি নিয়ে পুলিশ সুপারের কাছে প্রায় দেড়শো গ্রামবাসী আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তার পরেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। উল্টে অভিযোগকারীদের মধ্যে বেশি সক্রিয় উৎপল পাল নামে এক যুবককে ডাকাতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বর্তমানে তিনি জেল হেফাজতে আছেন।

সোমবার ফের গণস্বাক্ষর করে বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে। গ্রামবাসী শুভেন্দু বৈরাগ্যের অভিযোগ, “বহু পরিবার জুয়ায় সর্বস্বান্ত হচ্ছে। তার মধ্যে আমার ভাইয়ের পরিবারও আছে। স্ত্রীর গয়না পর্যন্ত ভাই খুইয়ে এসেছে। নিজের পরিবারে এমন ঘটনা ঘটায় চুপ থাকতে পারিনি। কিন্তু মিথ্যা মামলায় উৎপলকে জেলে পাঠাল পুলিশ।” উৎপল স্থানীয় বিশ্বদেব পালদের গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে কাজ করেন। বিশ্বদেব বলেন, “প্রতি মাসে আমাদের গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে কোটি টাকার লেনদেন হয়। কোনও দিন একটা টাকার গরমিল হয়নি। সে কিনা ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত? এটা মরে গেলেও বিশ্বাস করব না।”

চাপড়া থানার পুলিশের দাবি, দিন কয়েক আগে কুলগাছি মোড়ে ডাকাতির উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়ার অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও কয়েক জনের নাম পাওয়া যায়। উৎপল তাদের অন্যতম। আগে তিনি জুয়ার বোর্ড চালাতেন। সম্প্রতি সেটা তাঁর হাতছাড়া হওয়াতেই বাকিদের নিয়ে তিনি সক্রিয় হয়েছেন। যদিও চাপড়া থানার ওসি সুমিত ঘোষ এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “আমি গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement