এলেম নিজের দেশে
Coronavirus

তিন দিন হাঁটার পরে মাছের ট্রাকে ফিরলাম বাড়ি

আমি আর চাঁদু দু’জনে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে  হাঁটতে শুরু করি। রাস্তায় কোনও যানবাহন ছিল না।

Advertisement

মনিরুল শেখ

শ্রীপুর শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২০ ০৬:২০
Share:

ছবি রয়টার্স।

সংসারের হাল ফেরাতে ভিন্ রাজ্যে পড়ে থাকি। গত বছর তিনেক ধরে অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়া এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করি। আমাদের এলাকার বেশ কয়েক জন বিজয়ওয়াড়ার বিভিন্ন জায়গায় কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউবা রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। আমি আর ভবানীপুর গ্রামের এক আত্মীয় চাঁদু শেখ একই জায়গায় থাকতাম। একই মালিকের কাজ করতাম। লকডাউন জারি হতেই আমাদের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আমরা কাজের যায়গায় আটকে পড়ি। হঠাৎ কাজ বন্ধ হওয়ায় ঠিকাদারের থেকে টাকা পাইনি। কাছে থাকা টাকাও শেষ হতে থাকে। একদিন ঠিক করি, ভাগ্যে যা আছে থাক, পায়ে হেঁটেই ঘরে ফিরব।

Advertisement

আমি আর চাঁদু দু’জনে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে হাঁটতে শুরু করি। রাস্তায় কোনও যানবাহন ছিল না। দু’জনের কাছে সম্বল সব মিলিয়ে হাজার তিনেক টাকা। আর মুড়ি, চিঁড়ে। তাও শেষ হল। খাবার দোকানপাটও সব বন্ধ। কোথাও খোলা পেলে কলা বা মুড়ি কিনতাম। রাস্তার ধারে কলের জল খেতাম। এ ভাবে তিন দিন তিন রাত হেঁটে এক গ্রামে পৌঁছই। শরীর আর চলছে না। পায়ে প্রচণ্ড যন্ত্রণা।

সেই অবস্থাতেই বুঝলাম গ্রামে মাছের আবাদ হয়। বড় রাস্তার ধারে সারি সারি কয়েকটা লরি দাঁড় করানো আছে। সেখানে এক ট্রাক চালকের সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়। কথা বলে জানতে পারি, বাঙালি। নদিয়ার করিমপুরে বাড়ি। আমি আর চাঁদু ওই ড্রাইভারকে আমাদের নিয়ে বাড়ি নিয়ে আসার জন্য কাকুতি মিনতি করি। তিন দিন পর ট্রাক ছাড়বে, যাবে হাওড়া। দয়া করে ওই ড্রাইভার আমাদের তাঁদের সঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করেন। তাঁরা রান্না করে আমাদের দু’বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। খাইখরচের টাকা পর্যন্ত তিনি আমাদের কাছ থেকে নেননি। তিন দিনে আমরা অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করি। তিন দিন থাকার পর মাছ বোঝাই করে একদিন ভোরে ট্রাকটি হাওড়ার উদ্দেশে ছাড়ে।

Advertisement

তার দিন চারেক পর ভোরবেলায় ট্রাক বহরমপুর ঢোকে। ভাকুড়ির কাছে আমরা দু’জন নেমে যাই। সেখানে একটি টোটো ভাড়া করে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছই। বাড়ি ফেরার সময় সেই ড্রাইভারের ফোন নম্বর মোবাইলে সেভ করে রাখি। প্রায় মাস খানেক হয়ে গেল বাড়ি ফেরা। এখনও আমি নিয়মিত নদিয়ার ওই চালকের সঙ্গে কথা বলি। তাঁর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। তাঁকে আমাদের বাড়িতে আসার জন্য দাওয়াত দিয়েছি।

কিন্তু অসময়ে তিনি যে ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তেমনটা অন্য কেউ করেননি। এখানে কোনও কাজও পাইনি। পাব, এমন আশাও নেই। এলাকায় তেমন কাজই নেই। তাই লকডাউন উঠলে ফের কাজের যায়গায় ফিরে যাব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement