মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। কিন্তু ক্ষোভ কমছে না নবগ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।
মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে চোর সন্দেহে ধৃত যুবকের পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় সাসপেন্ড হলেন তদন্তকারী অফিসার শ্যামল মণ্ডলও। পুলিশ জানিয়েছে, আগেই সাসপেন্ড হয়েছেন ওই থানার ওসি অমিত ভকত। কিন্তু এতেও ক্ষোভ কমছে না গ্রামবাসীর। বার বার বিক্ষোভের মুখে পড়ছে পুলিশ। গ্রামে পুলিশ পৌঁছনোর আগেই হাজারখানেক মানুষ জড়ো হয়েছেন মৃতের বাড়ির সামনে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে পুলিশ। কথা বলা হচ্ছে যাদব মহাসভার সদস্যদের সঙ্গে।
ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার রাতে। থানার শৌচাগারে গোবিন্দ দাস ঘোষ এক বন্দির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় নবগ্রাম থানায়। ২৮ বছরের ওই যুবকের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশই পিটিয়ে খুন করেছে তাঁকে। পুলিশ দাবি করে, গোবিন্দ আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু এই মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় শুরু হয় উত্তেজনা। পুলিশ আধিকারিক এবং কর্মীদের বরখাস্তের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছে যাদব মহাসভা। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করতে হয় পুলিশকে। কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটানো হয়। কিন্তু তাতেও উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি। এর মধ্যে ওসির পর যে তদন্তকারী আধিকারিকের বিরুদ্ধে মৃতের পরিবার অভিযোগ করেছিল, তাঁকেও সাসপেন্ড করা হয়েছে।
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) সুবিমল পাল বলেন, ‘‘কর্তব্যে গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে তাঁর বাড়িতেও যান পুলিশকর্তারা। পাশাপাশি, যাদব মহাসভার সদস্যদের সঙ্গে একটি বৈঠক করে পুলিশ। তার পর এলাকায় শান্তি ফেরানোর বার্তা দিয়েছে দুই তরফই। মৃতের শেষকৃত্যের সময় যাতে কোনও গন্ডগোল না হয়, তার জন্য আবেদন রাখা হয়েছে গ্রামবাসীদের কাছে। কিন্তু এলাকা ছেয়ে রয়েছে হাজারো মানুষে। তাঁদের প্রত্যেকের ক্ষোভ পুলিশের বিরুদ্ধে।
ইতিমধ্যে এক জন ম্যাজিস্ট্রেট এবং আট জন বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে ময়নাতদন্ত হয়েছে গোবিন্দের দেহের। ভিডিয়োগ্রাফি হয়েছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পরিবারের লোকজনও। এর পর শেষকৃত্যের তোড়জোড় শুরু হয়। অন্য দিকে, মৃতের বাবা ষষ্ঠী ঘোষ বলেন, ‘‘আগামিকাল (রবিবার) ওসি এবং আইও (তদন্তকারী অফিসার)-এর বিরুদ্ধে খুনের মামলা করব।’’ সব মিলিয়ে তীব্র উত্তেজনা নবগ্রাম এলাকায়।