—প্রতীকী চিত্র।
চোর সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক যুবককে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল থানায়। পরে গ্রেফতার হন তিনি। শুক্রবার রাতে থানার শৌচাগারে গোবিন্দ ঘোষ নামে ওই যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় উত্তেজনা মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানা এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, মৃতের নাম গোবিন্দ দাস। ২৮ বছরের ওই যুবকের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশই পিটিয়ে খুন করেছে তাঁকে। পুলিশ অবশ্য আত্মহত্যার ‘তত্ত্বে’ অনড়। এই মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় শুরু হয়েছে উত্তেজনা। ‘অভিযুক্ত’ পুলিশ আধিকারিক এবং কর্মীদের বরখাস্তের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছে যাদব মহাসভা। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করতে হয় পুলিশকে। কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটানো হয় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত পাওয়া খবরে ওই থানার ওসিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সপ্তাহ খানেক আগে নবগ্রাম থানার সিঙ্গার গ্রামে প্রদীপ ঘোষ নামে কলকাতা পুলিশের এক কর্মীর বাড়িতে সোনার গয়না এবং নগদ টাকা চুরির অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্ত হিসেবে নাম উঠে আসে নবগ্রাম সেনাছাউনিতে দৈনিক মজুরের কাজ করা যুবক গোবিন্দ ঘোষের। পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই পুলিশকর্মী। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোবিন্দকে আটক করা হয়। পরিবারের অভিযোগ, তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পুলিশ আধিকারিক গোবিন্দকে বেধড়ক মারধর করেন। তাঁর বুকে এবং তলপেটে লাথি মারার অভিযোগ তুলেছে পরিবার। মৃত যুবকের বাবা ষষ্ঠী ঘোষ বলেন, ‘‘আমার ছেলের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন। তলপেটে কালো কালশিটের দাগ। মাথার পিছনে, ঘাড়ে গভীর ক্ষত। পিটিয়ে খুন করেছে ওকে শ্যামলবাবু (এক পুলিশ আধিকারিক)। ওঁর চরম শাস্তি চাই।’’
শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ নবগ্রাম থানার শৌচাগার থেকে গোবিন্দর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের দাবি, মামলা থেকে বাঁচতে আত্মহত্যা করেছেন গোবিন্দ। কিন্তু থানায় বন্দির যুবকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তে এলাকায় বাড়তে থাকে উত্তেজনা। যাদব মহাসভার কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক নবগ্রাম থানা ঘেরাও করে অভিযুক্ত আধিকারিকের বরখাস্তের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। যাদব মহাসভার পক্ষ থেকে সুনীল ঘোষ বলেন, ‘‘যে দিন এই অভিযোগ করা হচ্ছে, সে দিনও সেনাছাউনিতে কাজে গিয়েছিল গোবিন্দ। তার প্রমাণ দেওয়া সত্ত্বেও ওকে পুলিশ ছাড়েনি। সেনা আধিকারিকেরাও থানায় ফোন করেছিল। অভিযুক্ত পুলিশকর্মী ও আধিকারিকদের চূড়ান্ত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’
আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। ময়নাতদন্তের জন্য গোবিন্দর দেহ পাঠানো হয়েছে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে। এই ঘটনা প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সুরিন্দর সিংহ বলেন, ‘‘দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’ পরে তিনি আরও বলেন, ‘‘ তদন্তের স্বার্থে নবগ্রাম থানার ওসি অমিত ভকতকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে। বাকি তদন্ত চলবে।"