TMC Leader Murdered

তৃণমূল নেতাকে খুনের পর লোপাট ফোন! হেলমেট পরা এক জন চিনিয়ে দেন সত্যেনকে, বলছে পুলিশ

রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন সত্যেন। সুতিরমাঠ সেবা সমিতি-সহ একাধিক ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ ছিল সত্যেনের হাতে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:০৫
Share:

গুলি লাগার পর হাসপাতালে তৃণমূল নেতা সত্যেন চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে পর পর তিন রাউন্ড গুলি লেগেছিল গায়ে। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েছিলেন এলাকার জমি ব্যবসায়ী বলে পরিচিত তৃণমূল নেতা সত্যেন চৌধুরী। শুধু গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হননি অভিযুক্তরা। তার আগে তৃণমূল নেতার পকেটে থাকা দুটি স্মার্টফোন সঙ্গে করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। কিছু দূরে গিয়ে একটি মোবাইল বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্য একটি মোবাইল ছুড়ে দিঘির জলে ফেলে দেয় দুষ্কৃতীরা। রবিবার বহরমপুরের ভাকুড়ি মোড়ে তৃণমূল নেতা সত্যেন খুনের তদন্তে নেমে তদন্তকারীদের অনুমান, ফোনের শেষ কথোপকথনে কোনও রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতেই ওই ব্যবস্থা করে দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন সত্যেন। সুতিরমাঠ সেবা সমিতি-সহ একাধিক ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ ছিল সত্যেনের হাতে। বাম আমলে বেশ কয়েক বার বিভিন্ন অসামাজিক কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে জেল খেটেছেন তিনি। রাজ্যে পালাবদলের পর অধীরের সঙ্গে মতপার্থক্যের জেরে তৃণমূলে যোগ দেন সত্যেন। প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা সত্যেনকে তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়। যদিও গত বিধানসভা ভোটের পর থেকে সে ভাবে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি তাঁকে। আচমকা সেই সত্যেনের খুনের নেপথ্যে রহস্যভেদ করতে নেমেছেন তদন্তকারীরা।

প্রাথমিক তদন্তের পর যে কয়েকটি তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে, সেগুলি হল মোটরবাইকে আসা দুই শুটারের কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। তবে একই বাইকে থাকা তৃতীয় জনের মাথায় হেলমেট ছিল। তদন্তকারীদের অনুমান, এলাকার পরিচিত মুখ বলেই মুখ লুকোতে হেলমেট ব্যবহার করেছিলেন ওই ব্যক্তি। পুলিশের অনুমান হেলমেট পরা ওই ব্যক্তি স্থানীয় কেউ। তিনি সত্যেনকে চিনিয়ে দিতেই ঘটনাস্থলে এসেছিলেন।

Advertisement

পুলিশ জানতে পেরেছে, রবিবার দুপুরে বহরমপুরের চালতিয়া বিল সংলগ্ন রাস্তার ঠিক পাশে একটি নির্মীয়মান বহুতল আবাসনের সামনে এসে দাঁড়ায় একটি বাইক। সটান নেমে পড়ে দুই আরোহী। বাইক স্ট্রার্ট করা ছিল। সেখানে সত্যেনকে খুব কাছে পেয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। তৃণমূল নেতাকে লক্ষ্য করে চলে তিনটি গুলি। গুলি চালানোর ধরন দেখে পুলিশ নিশ্চিত যে আততায়ীরা শার্প শুটার।

সত্যেন যে নির্মীয়মান বহুতলের সামনে ছিলেন, তার পাশে একটি ওষুধের দোকানে সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। তার ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ জানতে পেরেছে, দুষ্কৃতীরা বাইকটি নিয়ে যে জায়গায় প্রথম পৌঁছোয় সেখান থেকেই গুলি করার টার্গেট ছিল সত্যেনকে। তবে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার আর ঝুঁকি নেয়নি তারা। তাই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত বদলে যায়। নির্মীয়মান বহুতলের ভিতরে ঢুকেই খুব কাছ থেকে গুলি করা হয় সত্যেনকে। তদন্তকারীদের একটি সূত্রে খবর, গুলি করার পরেও দুষ্কৃতীদের মধ্যে তেমন তাড়াহুড়ো লক্ষ্য করা যায়নি। খুব ঠান্ডা মাথায় সত্যেনের পকেট থেকে দুটি ফোন বার করে নিয়ে বাইকে ওঠে তারা। পরে তৃণমূল নেতার একটি ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে আর একটি ফোন কুমড়োদহ ঘাট এলাকায় কোনও একটি জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। আসলে কোনও একটি ফোনে শেষ কথোপকথনে খুনের কোনও সূত্র থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। মৃত তৃণমূল নেতার একটি ফোন উদ্ধার হয়েছে। তার তথ্য উদ্ধারের জন্য সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানি এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছেন তদন্তকারীরা।

মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( সদর) অসীম খান বলেন “এখন পর্যন্ত তদন্তে যা জানা গেছে, তাতে সত্যেন চৌধুরীকে খুনে সুপারি কিলার নিয়োগ করা হয়েছিল। আততায়ীদের গ্রেফতার করতে বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সত্যেন চৌধুরীর ফোনে খুনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকতে পারে বলেই মনে করছে পুলিশ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement