প্রতীকী চিত্র
পুজোর মুখে চাহিদা বাড়বে, এমনটা আন্দাজ করতে পারেননি অনেকেই। তাই এখন জোগনে টান পড়ছে। মিনাকারি ঢাকাই শাড়ির খোঁজে অনেকেই পুজোর মরশুমে শান্তিপুরের তাঁত ব্যবসায়ীদের কাছে যাচ্ছেন। অনলাইনেও বেশ চাহিদা। কিন্তু বেশির ভাগ মহাজন বা তাঁতির ঘরে ওই শাড়ি মজুত নেই— এমনটাই জানাচ্ছেন মিনাকারি উৎপাদকেরা। শান্তিপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী তারক দাসের মতে, কেমন বাজার হবে তা আন্দাজ করতে না পেরে তাঁরা এ বার অনেক কম শাড়ি তৈরি করেছেন, তাই চাহিদা শুরু হতেই মজুত ফাঁকা।
শুনতে একটু অবাক লাগলেও এই মুহূর্তে শান্তিপুরে তাঁতের শাড়ির ব্যবসায় এমনই টান লেগেছে। শুধু শান্তিপুর বলে নয়। ফুলিয়া, নবদ্বীপের মতো শাড়ি উৎপাদন এবং বিপণন কেন্দ্রের সর্বত্রই ছবিটা প্রায় একই। পাইকারি বা খুচরো বিক্রেতাদের সকলেই স্বীকার করছেন, করোনার জেরে গত ছ’মাস ধরে থমকে থাকা চাকাটা ফের ঘুরতে শুরু করছে। পুজোর মুখে এসে অন্তত দমবন্ধ করা ছবিটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। এখনও পুজোর প্রায় তিন সপ্তাহ বাকি। তত দিনে ছবিটা আরও বদলে যাবে বলেই তাঁদের ধারণা।
শান্তিপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী তথা নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের যুগ্ম-সম্পাদক তারক দাস জানাচ্ছেন, পুজোর বাজার নড়াচড়া করতে শুরু করেছিল দিন কুড়ি আগেই। গত সপ্তাহে সরকারি ভাবে পুজো নিয়ে নানা নিয়মকানুন ঘোষণার পরে বাজার আরও সচল হয়েছে। তাঁর কথায় “আসলে এ বার আমরা বুঝতে পারছিলাম না কেমন বাজার হবে। তাই সকলে অল্প কাপড় উৎপাদন করেছেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, দীর্ঘদিন করোনার সঙ্গে যুদ্ধের পর মানুষ ঠিক করেছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হবে। আর তার জন্য দুর্গাপুজোই ঠিক উপলক্ষ।” যদিও আর এক বস্ত্র ব্যবসায়ী সুভাষ দেবনাথ বলছেন, “শান্তিপুরের মাঠা শাড়ির বাজার কিন্তু এখনও পর্যন্ত খুব খারাপ। ষষ্ঠী আর ইদের বাজারে ডাহা মার খেয়েছেন তাঁতিরা।”
নদিয়ার তাঁতের শাড়ির অন্যতম উৎপাদন ও বিপণন কেন্দ্র ফুলিয়া। মূলত একটু বেশি দামের শাড়িই তৈরি হয় সেখানে। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শচীন বসাক বলছেন, “মোটামুটি ভাবে মাসখানেক ধরে পুজোর কেনাবেচা, বিশেষ করে পাইকারি বাজার শুরু হয়ে গিয়েছে। অন্য বারের মতো যে এ বার ব্যবসা হবে না এটা বলাই বাহুল্য। কিন্তু কয়েক মাস ধরে যে ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম তার থেকে ব্যাপারটা অনেকটাই বদলে গেছে। পাইকারি, খুচরো, পুশ সেলার সকলেই আসছেন।” তাঁর মতে, ফুলিয়ার শাড়ির দাম একটু বেশি হওয়ায় অন্য জায়গার তুলনায় ব্যবসা কম। কেন না এ বার এখনও পর্যন্ত কমদামের শাড়ি কেনার ঝোঁকটাই বেশি। ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে শাড়ির চাহিদা বেশি। অন্য বার সেটা ১৫০০-২০০০ থেকে শুরু হয়। তবে তাঁদের অনুমান, সময় যত গড়াবে তত জমে উঠবে বাজার। বস্তুত দীর্ঘ লকডাউনের পর নানা সংস্থায় কাজকর্ম সবে স্বাভাবিক হচ্ছে। মানুষ কাজে ফিরছেন। তাই ধীরে হলেও বাজার সচল হচ্ছে। শহরের মাসমাইনের চাকরিজীবী ছাড়া অন্য শ্রেণির মানুষের হাতে টাকাপয়সা এখনও বেশি নেই। কিন্তু ভাল বাজার পাওয়ার দৌলতে গ্রামের চাষিদের হাতে ফসলের লাভের কড়ি রয়েছে। তাঁরা কেনাকাটা শুরু করেছেন। আবার শহরের যে অংশ চাকরিজীবী, যাঁদের একটা নিশ্চিত রোজগার আছে, দু’দিন পরে মাসপয়লা হলেই তাঁরা বাজারে আসবেন।
রানাঘাটের বস্ত্র ব্যবসায়ী আশিস দেবনাথ জানাচ্ছেন, তিনি মাস দুয়েক আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন। তাঁর কথায়, “যখন আনলক পর্বে সব একটু একটু করে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল, তখনই বোঝা যাচ্ছিল যে কাপড়ের বাজার পুজোতে খুব খারাপ হবে না। কাজ হারানো মানুষ বেতন কমলেও কাজে ফিরছেন। সর্বোপরি গ্রামের চাষির হাতে নগদ আছে। তাই আমাদের মনে হয়েছিল, পুজোর মুখে বাজার ঠিক লেগে যাবে। আমার ধারণা, পুজোর বাজার অন্য বারের প্রায় ৯০ শতাংশ ছুঁয়ে যাবে।” নবদ্বীপের বস্ত্র ব্যবসায়ী রাজেশ আগরওয়াল বলছেন, “করোনা শএষ না হলেও ক্রেতারা আসতে শুরু করছেন। তবে বাজেট খুব কম। তাই অন্য বার যেখানে ৩০০০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি দরের শাড়ি মজুত করার দিকে জোর দিই, এ বার বেশি পরিমাণে কম দামের জিনিস রাখছি।” নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের যুগ্ম-সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা বলেন, “এত দিন পর পুজোর বাজার ঘিরে ব্যবসায়ীরা যথাসর্বস্ব নিয়ে ঝাঁপিয়েছেন। মানুষ তাতে সাড়া দিচ্ছেন।” একটু কমতি হলেও পুজোর বাজার জমে যাবে, সেই ইঙ্গিতই স্পষ্ট হচ্ছে।