প্রতীকী ছবি।
সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত শমসেরগঞ্জের এক বিএসএফ জওয়ানকে তিন দশক পর ‘অপারেশনাল ক্যাজুয়ালিটি’ শংসাপত্র দিয়ে সম্মান জানাল বিএসএফ। জওয়ানের নাম চাঁদু ঘোষ, বাড়ি শমসেরগঞ্জের কোহেতপুর।
বৃহস্পতিবার বিএসএফ আধিকারিকরা তাঁর বাড়িতে এসে তার বিধবা মা রাধারানী ঘোষের হাতে ওই শংসাপত্র তুলে দেন। ছেলের মৃত্যুর পর তিনি এখন বহরমপুরে তাঁর আর এক ছেলের কাছে থাকেন।
বিএসএফের ১১৭ নম্বর বাহিনীর কমান্ড্যান্ট ধরমজিত সিং রাধারানী দেবীর হাতে তাঁর শহিদ ছেলের অতুলনীয় অবদানের জন্য ভারত সরকার প্রদত্ত শংসাপত্রটি তুলে দেন।
বিএসএফ সূত্রে জানানো হয়, প্রতিদিনই নিরাপত্তা বাহিনী ও সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে একটা না একটা সংঘর্ষ সামনে আসছে এবং প্রতিবারই সন্ত্রাসবাদীরা জওয়ানদের মনোবলের সামনে পরাজিত হচ্ছে। প্রাণ হারাতে হচ্ছে সন্ত্রাসবাদীদের। কিন্তু কখনও কখনও এই লড়াইয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানেরাও শহিদ হন।
৭৬ তম বিএসএফ বাহিনীর জওয়ান চাঁদু ঘোষ এই রকম এক সংঘর্ষেই নিজের জীবন বিসর্জন দেন।
চাঁদু ঘোষ ১৯৮৬ সালের ১৬ জুলাই সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে যোগ দেন। দু’বছর পর ১৯৮৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দার্জিলিঙের চরকোলি স্থানে যখন ৭৬ বাহিনীর জওয়ানেরা তল্লাশি চালাচ্ছিল, ঠিক সেই সময়েই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হঠাৎ জওয়ানদের উপর আক্রমণ করে। এই এনকাউন্টারে কনস্টেবল চাঁদু ঘোষ অদম্য সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন এবং সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রাণ হারান।
ইতিমধ্যেই অবশ্য চাঁদু ঘোষের নামে গ্রামেই ২০০৫ সালে কোহেতপুরে তাঁর স্মৃতিতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করেছে রাজ্য সরকার শহিদের প্রতি সম্মান জানাতে। সেই স্কুলে এখন ৭ জন শিক্ষক, ছাত্র ছাত্রী ৩৬৪ জন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্তমকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘বাবা মহাদেব ঘোষ চাইতেন তাঁর ৫ ছেলের একজন অন্তত যোগ দিক দেশের সেনা বাহিনীতে। তাই ২২ বছর বয়সে বড় ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন বিএসএফে। প্রথম পোস্টিং পায় নারায়ণপুর, মালদাতে। কয়েক মাসের মধ্যেই দার্জিলিং। তখন চরম উত্তেজনা চলছে সেখানে। সেখানেই জওয়ানদের সঙ্গে তল্লাশি চালাতে গিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে প্রাণ যায় চাঁদুর। সে কথা চিন্তা করলে আজও চোখে জল এসে যায়।’’ শিক্ষক উত্তমবাবু জানান, এখনও চাঁদুর কথা জানিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের কাছে তার বীরত্বের কথা শোনানো হয় স্কুলে।
বৃদ্ধা মা রাধারানী দেবীর বয়স এখন ৮৪ বছর। চাঁদুর বাবা ৬ বছর আগে মারা গেছেন।