সমশেরগঞ্জ

কাঠিতে আগুন, পুড়ে ছাই ৩৪ বাড়ি

ঘড়ির কাঁটা সবে দশটা ছুঁয়েছে। কোনও কোনও বাড়ি থেকে ভাইফোঁটার শাঁখের আওয়াজ ভেসে আসছে। আর তাই শুনে দেরি হয়েছে ভেবে পুকুরে তড়িঘরি ডুব দিয়ে অনেকেই ছুট লাগালেন বাড়ির দিকে। এক কথায় পুরো গ্রামটাই ছিল উৎসবের মেজাজে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০৮
Share:

ঘড়ির কাঁটা সবে দশটা ছুঁয়েছে। কোনও কোনও বাড়ি থেকে ভাইফোঁটার শাঁখের আওয়াজ ভেসে আসছে। আর তাই শুনে দেরি হয়েছে ভেবে পুকুরে তড়িঘরি ডুব দিয়ে অনেকেই ছুট লাগালেন বাড়ির দিকে। এক কথায় পুরো গ্রামটাই ছিল উৎসবের মেজাজে। কিন্তু আধ ঘণ্টার মধ্যে পুরো গ্রামটাই যেন ছারখার হয়ে গেল। মঙ্গলবার সমশেরগঞ্জের হাঁসুপুরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ছাই হয়ে গেল ৩৪টি বাড়ি। ফুল-চন্দন পড়ে রইল থালায়। গ্রামের বাসিন্দারা ঝাঁপিয়ে পড়লেন আগুন নেভাতে। খবর দেওয়া হলেও পাঁচ কিমি দূরত্বের দমকল পৌঁছল এক ঘণ্টা পরে। ততক্ষণে গ্রামের বাসিন্দারা শ্যালো মেশিন এনে আগুনের সঙ্গে যুঝতে শুরু করেছেন। তাঁদের চেষ্টাতেই আরও বড় ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেঁচে গেল গ্রাম। ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় আগুন আয়ত্ত্বে আসে। ধানক সম্প্রদায় অধ্যুষিত হাঁসুপুর গ্রামে সকলেই কৃষিজীবী। ঘরে, ঘরে পাট ও পাটকাঠি মজুত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। এই গ্রাম বিখ্যাত মুড়ির জন্য। জেলা ও ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন প্রান্তে হাতে ভাজা মুড়ি যায় এই গ্রাম থেকে। তাতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয় মজুত রাখা পাটকাঠি। গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় রয়েছে একটি আইসিডিএস কেন্দ্র। এ দিন অবশ্য সেটি বন্ধ ছিল। তার পাশেই প্রচুর পরিমাণে পাটকাঠি মজুত রয়েছে। সেখান থেকেই আগুন ছড়িয়েছে বলে অনুমান দমকল ও পুলিশের । সেখান থেকে প্রথম আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশেই অশোক মন্ডলের বাড়িতে। সম্পন্ন চাষি অশোকবাবুর ঘরে প্রচুর পরিমাণে ধান রাখা ছিল বস্তা বোঝাই। বের করতে পারেন নি কিছুই। উঠোনে ছিল পাট ও পাটকাঠি। চোখের সামনে ছাই হয়ে যায় সে সব। অশোকবাবু বলেন, ‘‘বাড়িতে ভাই ফোঁটার তোড়জোর চলছিল। সে দিকেই ব্যস্ত ছিল সকলে। হঠাৎ দেখি আগুন। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেল। কিছুই বাঁচাতে পারলাম না।’’

Advertisement

ততক্ষণে চিৎকার চেঁচামেচিতে জড় হয়ে গিয়েছে গোটা গ্রাম। এ দিকে হাওয়ার দাপটে একের পর এক বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। খবর যায় স্থানীয় পঞ্চায়েত, সামশেরগঞ্জ থানায় এবং দমকলে।

বাড়ি গ্রাস করছে আগুনে। ভাইফোঁটার চন্দনবাটি ফেলে যে যেদিকে পারছেন ছুটছেন। ঘরের মধ্যে যে ছাগলগুলি বাঁধা রয়েছে, তা আর খেয়াল ছিল না কারওর। বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুনে পুড়ে বেশ কয়েকটি ছাগল মারা গিয়েছে। পুড়ে গিয়েছে ২২টি সাইকেলও।

Advertisement

একদিকে আগুন দ্রুত ছড়াচ্ছে। অন্যদিকে দমকলেরও দেখা নেই। এই অবস্থায় আগুন মোকাবিলায় নামেন গ্রামের বাসিন্দারা। ১২টি শ্যালো পাম্প দিয়ে পুকুর থেকে জল তুলে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন।

এ দিকে সর্বস্ব হারিয়ে রাস্তায় বসে কপাল চাপড়াচ্ছেন দুই ভাই প্রেম কুমার ও শিব কুমার। তাঁরা জানাচ্ছেন, ভাইফোঁটার জন্য তখন সব বাড়িতে রান্নাই শুরু হয়নি তখনও। তার ফলে উনুনের আগুন থেকে আগুন লাগার কোনও কারণ নেই।

দশ-বারোটি বাড়ি যখন আগুনের গ্রাসে, তখন ঘটনাস্থলে আসে দমকলের একটি ছোট ইঞ্জিন। গ্রামের বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন মন্ডল বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে বড়জোর পাঁচ কিলোমিটার দূরে ধুলিয়ান দমকল কেন্দ্র। খবর পেয়ে তারা এসেছে এক ঘণ্টা পর। তার পরে আবার মাঝ পথে জল ফুরিয়ে যায় তাদের। গ্রামের শ্যালো পাম্পগুলো না থাকলে আগুন আরও ভয়াবহ রূপ নিত।”

অভিমন্যু বলছেন, “গ্রামের বাসিন্দারা একজোট হয়ে এক সময় বিদ্যুৎ চুরি রুখে বিদ্যুৎ দফতরের শংসাপত্র পেয়েছিলেন। এবারও সেই গ্রামের বাসিন্দারা একজোট আগুন মোকাবিলায় না নামলে আরও বড় ক্ষতি হয়ে যেত।’’

দমকলের ধুলিয়ানের আধিকারিক বিষ্ণুপদ রায় অবশ্য দমকলের গাফিলতির দায় মানতে চান নি। তিনি জানান, থানা থেকে খবর দেওয়া মাত্র দমকল কর্মীরা সেখানে গিয়েছিলেন। গ্রামবাসিরা সরাসরি দমকল কেন্দ্রে ফোন করলে ইঞ্জিন আরও দ্রুত পৌঁছে যেত।

তবে গ্রামের ছোট রাস্তায় বড় গাড়ি ঢোকেনি। তাই ছোট গাড়ি নিয়ে যেতে হয়েছে। মাত্র ৩ হাজার লিটার জল ধরে তাতে। সেই জন্যই জল ফুড়িয়ে যায় । তবে গ্রামে বহু শ্যালো থাকায় সমস্যা হয় নি।

বিষ্ণুবাবু বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছে সিগারেট বা বিড়ির আগুন থেকে আইসিডিএস কেন্দ্রের সামনে রাখা পাটকাঠির পালায় আগুন ধরে যায়।”

আগুন লাগার খবর পেয়ে গ্রামে যান প্রশাসনের কর্মীরা। ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে কিছু ত্রিপল ও কাপড়, কম্বল এবং খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়। তৃণমূলের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম জানান, বিডিও-র হাতে এদিন একটি তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছে। আগুনে যে ৩৪টি বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তালিকায় তাদের নাম রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement