Accident

পিকনিকের আগেই তছনছ পুরো পরিবার

মঙ্গলবার ভোরে রেজিনগরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় রানাঘাটের ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:২০
Share:

দুর্ঘটনায় চোট পেয়ে বাবার বাড়ি কৃষ্ণনগরের ভাতজাংলায় দুই মেয়েকে নিয়ে রয়েছেন মুক্তি দাস। সেই দুর্ঘটনায় জখম মুক্তির স্বামী সমীর দাসের মঙ্গলবার বিকেলেই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে। বাবার বাড়ির সকলে সে কথা জানলেও মুক্তিকে কিছুই জানানো হয়নি। বুধবার বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জামাই সমীর দাসের মৃতদেহ নিতে এসে এমন কথা জানালেন কৃষ্ণনগরের ভাতজাংলার সুনীল মণ্ডল। তিনি জানান, দুর্ঘটনায় মেয়ের মাথায় চোট লাগার পাশাপাশি দুই হাতের হাড় ভেঙেছে। খুদে দুই নাতনিও সামান্য চোট পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘তাদের কৃষ্ণনগরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে মঙ্গলবার রাতেই আমাদের বাড়ি নিয়ে গিয়েছি। মেয়ে বার বার সমীরের খোঁজ নিচ্ছিল। কিন্তু সমীরের মৃত্যুর শোক সহ্য করতে পারবে না ভেবে মেয়েকে সে কথা জানাইনি। বুধবার রাতে গ্রামের বাড়ি দেহ পৌঁছলে সব জানাব।’’

Advertisement

মঙ্গলবার ভোরে রেজিনগরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় রানাঘাটের ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে চার জনের ও মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল হাসপাতালে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা সকলেই নিকট আত্মীয়। মৃত যুবক সমীর দাসের মা, দুই মাসি, বোন ও ভাগনের মৃত্যু হয়েছে। সমীর দাস বাদে বাকি পাঁচ জনের মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃতদেহের ময়না তদন্ত করে পরিবারের লোজনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বুধবার বিকেলে সমীর দাসের মৃতদেহের ময়না তদন্ত করে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

সমীর দাসের মামা রামপদ সরকারের বাড়িও একই জায়গায়। এদিন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের মর্গে ভাগনের মৃতদেহ নিতে এসে মামা রামপদ সরকার জানান, ‘‘দুর্ঘটনায় আমার দুই দিদি, এক বোন, ভাগনি ও তাঁর ছেলে এবং ভাগনে মারা গিয়েছে। এভাবে গোটা পরিবার শেষ হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। সেদিন ওই গাড়িতেই আমার ছোট বোন ও তাঁর দুই মেয়ের আসার কথা ছিল। কিন্তু লোক বেশি হওয়ায় এবং গাড়ি পছন্দ না হওয়ায় সেদিন তাঁরা আসেনি।’’

Advertisement

ওই ঘটনায় জখম হয়েছে তাহেরপুরের বামনগাছির বাবন মণ্ডল, তাঁর স্ত্রী মনু মণ্ডল ও মেয়ে নীলিমা মণ্ডল। মনু ও নীলিমা এখনও মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদিন মনু জানান, ‘‘গাড়িতে উঠে আমরা অধিকাংশ ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুমন্ত অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে কী ঘটেছে বুঝতে পারিনি। ঘটনার পরে পুলিশ যখন আমাকে টেনে বের করছিল তখন মনে হচ্ছিল কিছু একটা ঘটেছে। পরে হাতে ও মাথায় ব্যথা অনুভব করতে বুঝতে পারি আমাদের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।’’

রেজিনগরে দুর্ঘটনায় জখমদের মধ্যে এক জনের অবস্থা গুরুতর। বুধবার ভোরে কার্তিক মণ্ডল নামে ওই কিশোরকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে কলকাতায় রেফার করা হয়েছে। অন্যদিকে সুস্থ হওয়ায় বুধবার তিন জনকে ছুটি দিয়েছে। এখনও তিন জন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মৃত ৬ জনের মধ্যে পাঁচজনের ময়না তদন্ত করে মঙ্গলবারই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। বুধবার ভোরে সমীর দাস নামে এক যুবকের মৃতদেহের ময়না তদন্ত হয়েছে। সকাল থেকে দেহ পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল পুলিশ। রানাঘাট থেকে দেরিতে গাড়ি আসায় এদিন বিকেলে সমীরের মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

সমীরের দেহ দিতে দেরি হল কেন? মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমএসভিপি অমিয়কুমার বেরা বলেন, ‘‘সূর্যালোক থাকতে ময়না তদন্তের নিয়ম। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলে সমীর দাসের মৃত্যু হয়েছে। এর পরে মৃত্যু ঘোষণাসহ নথিপত্র তৈরি হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তাই বুধবার সকালে ময়না তদন্ত করে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement