নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন ছুটিতে

সময়টা বেছে নিল আততায়ী

চাল-চলন, হাঁকডাক, দিনরাতের নিরাপত্তারক্ষী— হাঁসলখালিতে তিনিই যে ‘শেষ কথা’, ক্ষণে ক্ষণে মালুম হত। সেই দাপটের নিশ্চিন্ত আবহেই দলীয় কার্যালয়ের মধ্যে ঝাঁজরা হয়ে গেলেন দুলাল বিশ্বাস। কী করে?

Advertisement

সুস্মিত হালদার, সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বগুলা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৪০
Share:

চাল-চলন, হাঁকডাক, দিনরাতের নিরাপত্তারক্ষী— হাঁসলখালিতে তিনিই যে ‘শেষ কথা’, ক্ষণে ক্ষণে মালুম হত।

Advertisement

সেই দাপটের নিশ্চিন্ত আবহেই দলীয় কার্যালয়ের মধ্যে ঝাঁজরা হয়ে গেলেন দুলাল বিশ্বাস। কী করে?

তদন্তে নেমে এখনও হাতড়ে চলেছে পুলিশ। হাতড়ে কি চলেছে? জেলা পুলিশের এক কর্তা ফিসফিস করছেন, ‘‘মনে রাখবেন, এই কেসে হাত টানলে মাথা চলে আসতে পারে!’’ সে জন্যই কি একটু ধীরে চলছেন তদন্তকারীরা? তবে, পুলিশের কাছে একটা ব্যাপার স্পষ্ট, দুলালের ঘনিষ্ট কেউ এই খুনের সঙ্গে জড়িত। কেন?

Advertisement

রবিবার ব্যাক্তিগত কারনে ছুটি নিয়েছিলেন তাঁর নিরাপত্তারক্ষী। সেটা তাঁর ঘনিষ্ট কেউ ছাড়া জানা সম্ভব ছিল না। সেই সুযোগটাই যে কাজে লাগানো হয়েছে এ ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত।

বগুলায় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় থাকলেও বছর দেড়েক আগে তিনি বগুলা শ্রীকৃষ্ণ কলেজের সামনে বগুলা-দত্তফুলিয়া রাস্তার পাশেই একটি ছোট্ট দোকান ঘরে নিজের দলীয় কার্যালয় খোলেন। সেখানে প্রতি দিন তিনি রাত আটটার পরে এসে বসতেন। অন্য দিনের মত এ দিনও একেবারে রাস্তার সোজাসুজি টেবিলের ওপারে রিভলবিং চেয়ারে বসেছিলেন দুলাল। দু’পাশে চেয়ারে কয়েকজন অনুগামী। কার্যালয়ের বাইরে তার বড় ছেলে, কলেজের জিএস ও গাড়ির চালক গল্প করছিল।

সেই সময় আচমকা জনা পাঁচেক মুখ ঢাকা দুষ্কৃতী কার্যালয়ের ঢুকে দুলালকে লক্ষ্য করে পর পর গুলি ছোড়ে। তাঁর ছেলে দীপঙ্কর বলছেন, “ওদের মুখ ঢাকা ছিল। আমরা ধরতে গেলে এক জনের মুখের ঢাকা খুলে গিয়েছিল। আমি চিনেও ফেলেছি।”

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এমনিতেই গোটা হাঁসখালি ব্লকে প্রচন্ড দাপট ছিল দুলালবাবুর। বিশেষ করে বগুলার দুটো গ্রাম পঞ্চায়েত, গাজনা, রামনগর এলাকায় তাঁর দাপটে বিরোধীরাতো বটেই পুরোপুরি পায়ের তলার মাটি হারিয়ে ফেলেছিল দলে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতারাও। এহেন এক জন দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতাকে প্রকাশ্যে বাজারের ভিতরে গুলি করে খুন করার সাহস দেখাবে কারা? শুধু তাঅ নয়, খুনের পরে তারা দিব্যি হেঁটেই ফিরে গিয়েছিল বলেই জানা গিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদের চিনতেও পারলেন না?

এখানেই খটকা লাগছে তদন্তকারীদের। বছর দেড়ের আগে দুলাল প্রথমবার আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই সরকারি নিরাপত্তারক্ষী জুটেছিল। ছিল তাঁর নিজস্ব ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরাও। কিন্তু রবিবার তাঁরা সবাই ছিলেন ছুটিতে। সবাই এক সঙ্গে ছুটিতে গেলেন কী করে?

কী করেই বা দলীয় কার্যালয় এবং উল্টো দিকে ব্যাঙ্কে সিসিটিভি থাকা সত্ত্বেও ধরা প়ড়ল না কোনও ফুটেজে?

দলীয় ওই কার্যালয়ের পাশেই বেশ কয়েকটি ঝুপড়ি। আততায়ীরা ওই পথেই যে হেঁটে গিয়েছেন, জানিয়েছেন ঝুপড়ির অনেকেই।

তাঁদেরই এক জন বিপুল বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওরা (দুষ্কৃতীরা) লাইনের পাশে অস্ত্র ফেলে গিয়েছিল, আমরাই পুলিশে খবর দিলাম।’’ এক পুলিশ কর্তার প্রশ্ন, ‘‘সবাই সব কিছু দেখল, অথচ কেউ এগিয়ে এল না!’’

দিনান্তে পুলিশ কুকুরও এসেছিল। তবে দলীয় কার্যালয় থেকে খানিক এগিয়েই সে খেই হারিয়ে ফেলে।

এখন দেখার পুলিশ সেই খেই খুঁজে পায় কিনা!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement