সুমনা প্রামাণিক
ছোটবেলা থেকেই একের পর এক পাঁচিল— একে একে সব টপকে গিয়েছিল সে।
কখনও পাড়ার বখাটে ছেলেদের টিটকিরি কিংবা পড়শির অনুকম্পা। আর, শেষতক তার নিজের পরিবার।
সেই লড়াইটাই তাঁকে টেনে এনেছিল কলেজ চত্বরে। তারপর, বিশ্ববিদ্যালয়ের উঠোন। লড়াইয়ের ফাঁক গলে চলছিলও বেশ, তবে পড়ার ফিজ আর ভাড়া বাড়ির আবদার চুকিয়ে শেষতক মুখ থুবড়েই পড়ে গিয়েছিল সে। সেই হতশ্রী অবস্থায় হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছে নদিয়া জেলা প্রশাসন। রূপান্তরকামী সুমনা প্রামাণিক বলছেন, ‘‘ছোটবেলায় বাড়ির সঙ্গ হারাই। ঘরহীন একা আমি। প্রশাসন যেন পরিবার হয়ে হাত ধরল আমার।’’
কৃষ্ণনগরের শক্তিনগরের সুমনা স্নাতক হয়েছিল বগুলা শ্রীকৃষ্ণ কলেজ থেকে। অঙ্কে অনার্স নিয়ে পাশ করে এমএসসি-তে ভর্তি হয়েছিল কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সুমনার কথায়, “পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কটা ছিড়ে গিয়েছিল সেই কবে। টিউশন করে পড়াশুনো চালাতে হয়। টানাটানিতে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেই রুজির রাস্তাটা।’’ পড়া ছেড়ে দেবে ভাবছিল। ঠিক সেই সময়ে, এগিয়ে এসেছিলেন তারই পরিচিত এক রুপান্তরকামী স্কুল শিক্ষিকা দিদি, অত্রি কর।
পরে সুমনাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি দেখা করেন নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তার সঙ্গে। অত্রি বলেন, “আট মাস আগে সুমনা জানিয়েছিল বড্ড অভাবে রয়েছে সে। ব্যাপারটা ট্রান্সজেন্ডার ডেভলপমেন্ট বোর্ডকে জানাই। কিন্তু সাড়া মিলল না।’’ অথচ খবর পেয়েই এগিয়ে এসেছিল জেলা প্রশাসন। সুমিত গুপ্তা বলেন, “টাকার অভাবে যাতে পড়াশুনো বন্ধ না হয়ে যায়, আমরা যা করার সবই করব।”
সেই ছোটবেলায় করিমপুরের অনাথ আশ্রম-জগন্নাথ হাইস্কুল পেরিয়ে বি়জ্ঞান বিভাগ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের বিজয়লাল স্কুলে। কিন্তু বড় হতে শরীর জুড়ে পরিবর্তন স্পষ্ট হতেই বাড়ি তাকে ভেন্ন করেছিল। একটি সংস্থা ও এক মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অ্যানি দত্ত, মনভাঙা সুমনাকে টেনে তুলেছিলেন তাঁরাই। ট্রেনের ভিড় কামরায় পিছনের সেই সব বাড়ানো হাতগুলো এখন ভীষণ মনে পড়ে তাঁর। তবে, লড়াইটা চলছেই। বলছেন, ‘‘ওটা শেষ হবার নয়। লড়াইটা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে জানেন।’’