Lalgola

ফাঁকা স্টেশনে দাঁড়িয়ে জনহীন ট্রেন

একটা সময় যেই ট্রেন ছিল লালগোলার বাসিন্দা, বিশু কুণ্ডু, রফিক শেখ, অসীম মণ্ডল, প্রণবদের মতো লোকের সমস্ত কিছু। সারাদিন কাটত ট্রেনে মধ্যেই হরেক রকম মানুষের আলাপ, হাসিতে। ফাঁকা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকে লালগোলা প্যাসেঞ্জার।

Advertisement

মৃন্ময় সরকার

লালগোলা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২০ ০১:১৯
Share:

শূন্য প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ট্রেন।

রোজ দিনের আলো ফুটতে না ফুটতেই হতেই ব্যস্ততা শুরু হয়ে যেত লালগোলার বাসিন্দা প্রণব সরকারের মতো বেশ কয়েক জনের। তারপর এক হাতে চায়ের কেটলি আরেক হাতে বালতিতে করে করে চায়ের কাপ, চিনি, কফির কৌটো, বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে উঠে পড়তেন লালগোলা শিয়ালদহ ভাগীরথী এক্সপ্রেসে।

Advertisement

ভাগীরথীর চাকা গড়তে না গড়তেই শুরু হত একের পর এক চায়ের অর্ডার তারপর সারাদিন শেষে ফের ভাগীরথী এক্সপ্রেসে চা বিক্রি করে বাড়ি ফিরতেন প্রণবরা। কিন্তু এখন লালগোলা স্টেশনে ট্রেন আছে বটে তবে। তাবে আর চাকা গড়ায় না খোলা হয়না ট্রেনের দরজাও। কাজেই সেই চেনা চিত্রটাও বদলে গিয়েছে প্রণবের রুজি হারিয়ে ক'দিন একশো দিনের কাজে লেগেছিলেন। তবে রক্তে শর্করার সমস্যা থাকায় বেশি দিন কাজ করতে পারেননি। এখন বাড়িতে বসে সঞ্চয় ভেঙেই চলে দিন। বাড়ির বারান্দায় বসে এদিন প্রণব বললেন, ‘‘সুগারের ওষুধ কিনব তারও পয়সা নেই। চার মাস ধরে ওষুধ কিনে দিচ্ছেন পঞ্চায়েতের প্রধান।’’

একটা সময় যেই ট্রেন ছিল লালগোলার বাসিন্দা, বিশু কুণ্ডু, রফিক শেখ, অসীম মণ্ডল, প্রণবদের মতো লোকের সমস্ত কিছু। সারাদিন কাটত ট্রেনে মধ্যেই হরেক রকম মানুষের আলাপ, হাসিতে। ফাঁকা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকে লালগোলা প্যাসেঞ্জার।

Advertisement

আর প্লাটফর্ম জুড়ে নেই সেই মানুষের ভিড় কোলাহল। এখন শুধুই প্ল্যাটফর্ম জুড়ে রয়েছে রেল পুলিশের ভারি বুটের আওয়াজ। এখন প্রতিদিনই চারবার করে লালগোলা স্টেশনে ট্রেন আসে বটে তবে, তা থেকে আর যাত্রীরা নামেন না, আসেন রেলের কর্মীরা। সূত্রের খবর, লালগোলা থেকে প্রতিদিন শিয়ালদহ ও কলকাতা রুটের প্যাসেঞ্জার ও এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়ে। লালগোলা স্টেশনে প্রায় ৮০ জন হকার রয়েছে। স্টেশনে ঘুগনি বিক্রি করতেন স্থানীয় বাসিন্দা মহাপ্রসাদ মণ্ডল।

এখন তিনি মাছ বিক্রেতা। এদিন তিনি বললেন, ‘‘কী করব, আমাদের লাইফ লাইনই তো বন্ধ হয়ে গেল।’’ লালগোলা স্টেশনের সামনেই সাইকেল গ্যারেজ রয়েছে তাপস ঘোষের। ট্রেন বন্ধ হওয়ায় ঝাঁপ পড়েছে তার গ্যারেজেও। পুরনো স্মৃতি হাতড়ে তাপস এদিন বললেন, "সেই রাত থাকতে গ্যারেজ খুলতে হত। সারাদিন এই ট্রেন আসছে ট্রেন যাচ্ছে। একটু বসব সেই ফুরসত থাকত না। এখন সংসার চলবে কিভাবে তাই জানি না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement