এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে মেঘমা। নিজস্ব চিত্র।
পাহাড় টানে বাবা-মাকে। সেই টানে বারবার ছুটে যান ট্রেকিংয়ে। বাবা-মাকে দেখে আর ঘরে থাকেনি সাড়ে ছয় বছরের ছোট্ট মেঘমা। বাবা-মায়ের সঙ্গে পাড়ি দিল মাউন্ট এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে। প্রায় ৫৩৬৪ মিটার উচ্চতা হেঁটে পাড়ি দিয়েছে অনায়াসে।
শান্তিপুরের হিজুলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্জিত ঘোষ। স্ত্রী মন্দিরা শান্তিপুরের রবীন্দ্র বিদ্যাপীঠের শিক্ষিকা। তাঁদেরই মেয়ে মেঘমা শান্তিপুরের জনকল্যাণ বুনিয়াদি শিক্ষালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। এর আগে বার কয়েক ট্রেকিংয়ে গেলেও এ বার এভারেস্টের বেস ক্যাম্প যাত্রার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা। মেয়েকে নিয়েই রওনা দেন শান্তিপুর থেকে। গত ২২ অক্টোবর ট্রেন পথে পৌঁছন বিহারের জয়নগর। সেখান থেকে সড়কপথে জনকপুর হয়ে রামেছাপ। সেখান থেকে বিমান ধরে লুকলা। ২৪ অক্টোবর লুকলা থেকেই হেঁটে যাত্রা শুরু হয়। সঙ্গে ছিলেন গাইড সাগর ক্ষাত্রী। যাত্রার নবম দিন, পয়লা নভেম্বরে পৌঁছন প্রায় ৫৩৬৪ মিটার উঁচুতে বেস ক্যাম্পে। ওই দম্পতির সঙ্গে তাঁদের মেয়েও পুরো পথটাই হেঁটে গিয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় হোম-স্টেতে রাত্রিবাস করেন তারা। শুধু মাঝে এক দিন দিন ডিংবোচেতে বিশ্রাম নেন। পয়লা নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ তাঁরা পৌঁছন বেস ক্যাম্পে। সেখানে কিছুক্ষণ কাটানোর পর আবহাওয়া খারাপ হতে থাকায় মিনিট চল্লিশের মধ্যে তাঁরা নীচে নামতে শুরু করেন। বিকেল ৩টে নাগাদ তাঁরা পৌঁছন গোরখশেপে। একই পথে একই ভাবে ফেরা। শিক্ষক দম্পতি জানাচ্ছেন, গত বছর অক্টোবরে মেয়েকে নিয়ে তাঁরা গিয়েছিলেন অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্পে। সেটা প্রায় ৪ হাজার ১৩০ মিটার উচ্চতায়। গত বছর মে মাসে মেয়েকে নিয়ে তাঁরা গিয়েছেন হর কি দুন।
পর্বতারোহীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত বেস ক্যাম্প থেকেই যাবতীয় অভিযান পরিচালনার কাজ হয়। বেস ক্যাম্প পর্যন্ত বেশ কিছুটা খাড়া পথ অতিক্রম করতে হয়। বেস ক্যাম্প পর্যন্ত ট্রেকিং করে পাড়ি দেন। তার পর থেকেই শুরু হয় ক্লাইম্বিং। সাড়ে ছয় বছরের বাচ্চার বেস ক্যাম্প পর্যন্ত উচ্চতা এবং দূরত্ব হেঁটে পাড়ি দেওয়া কৃত্বিত্বের বলেই মনে করছেন। এর আগে মাউন্ট এভারেস্ট স্পর্শ করে আসা বসন্ত সিংহ রায় বলছেন, "একটা শিশু এতটা পথ পাড়ি দিয়েছে, এটাই বা কম কিসের। বাবা-মাও তাকে প্রকৃতির সঙ্গে মিশতে, প্রকৃতিকে ভালবাসতে শেখাচ্ছেন। নিঃসন্দেহে এটা ভাল দৃষ্টান্ত।"
কল্যাণীর কলেজ অব মেডিসিন অ্যান্ড জহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মঞ্জুরী বসু বলছেন, "ছোট বাচ্চাদের মাংস পেশীর শক্তি এবং ফুসফুসের আয়তনও বড়দের থেকে কম হয়। সে ক্ষেত্রে তাদের এতটা উচ্চতায় এতটা পথ পাড়ি দিতে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হতে পারে। দেখতে হবে আগেই শিশুর এলার্জি বা শ্বাসকষ্ট জনিত কোন সমস্যা আছে কি না। সে বিষয়ে সতর্কতা নেওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যাবতীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েই যাওয়া উচিত।"
সঞ্জিত বলেন, ‘‘যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিলাম। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জ্বর, সর্দি, পেটব্যথা সংক্রান্ত নানা ওষুধপত্র নিয়ে গিয়েছিলাম। মেয়েও অনায়াসে আমাদের সঙ্গে দিনে প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা হেঁটেছে।’’