জল ময়ূর। তেহট্টের জলঙ্গি নদীতে। ছবি : সংগৃহীত
এক দশকেরও বেশি সময় পর ফের জলঙ্গিতে দেখা মিলল ‘ফেজ়েন্ট-টেল্ড জাকানা’ বা জলময়ূরের। জলঙ্গি নদীই এখন এই পাখির বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
তবে এই ঘটনায় মিশ্র প্রভাব বিভিন্ন মহলে। এই ছবি পাখিপ্রেমীদের খুশি করলেও স্থির জলাশয়ের পাখিকে নদীতে দেখে চিন্তায় পরিবেশ কর্মীরা। এই আবাসিক পাখির আগমনে জলঙ্গির অবরুদ্ধ হওয়ার প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি পরিবেশ কর্মীদের।
স্থানীয় ও পরিবেশ কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেল, মূলত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার পাখি জলময়ূর। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের প্রজনন প্রক্রিয়া চলে। জলজ গাছ, কীটপতঙ্গ এদের খাদ্য। স্থির জলাশয়েই এরা ডিম পাড়ে। পক্ষী বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, জল ময়ূর বিরল প্রজাতির পাখি নয়। আসলে ডিম পাড়ার জন্য এরা স্রোতহীন জলাশয় খোঁজে। জলাশয়ে কচুরিপানা ও শ্যাওলার উপর জায়গা করে ডিম পাড়ে এরা। তার জন্য তারা সুরক্ষিত জায়গা খোঁজে। সেই ভাবে তারা চূর্ণী নদীর তীরবর্তী এলাকার পাশাপাশি তেহট্টের মূল অংশের জলঙ্গি নদীকেই বেছে নিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায়ৃ জলাশয় বুজে গিয়েছে। অন্যদিকে একাধিক নদী নাব্যতা হারিয়ে বেহাল। সেগুলিতে স্রোত নেই। আর তাই স্থির জায়গা হিসেবে জলঙ্গি নদীকেই চিহ্নিত করেছে জল ময়ূর।
তবে জলাশয়ে এই পাখি দেখে পক্ষীপ্রেমীরা খুশি হলেও চিন্তায় পরিবেশ কর্মীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, চারপাশে খাল-বিল বুজে গিয়েছে। সে সব সংস্কারের কোনও উদ্যোগই দেখা যায়নি। তেহট্টেও প্রায় একই ছবি। জলঙ্গি নদী মৃতপ্রায়। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি গ্রামের চরমধুবোনার কাছে পদ্মা থেকে বেরিয়ে নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জের কাছে ভাগীরথীতে মিশেছে। দীর্ঘ পথে বিভিন্ন জায়গায় কচুরিপানায় আবদ্ধ জলঙ্গি। তার উপর নানা অবৈধ ও অসচেতনতা মূলক কর্মকাণ্ডের জন্য বহু জায়গায় জলাশয়ের আকার নিয়েছে এই নদী। সব মিলিয়ে অবহেলার শিকার এই নদী। পরিবেশ কর্মী শঙ্খশুভ চক্রবর্তী বলেন, “নদী, খাল-বিল নিয়ে নানা আন্দোলন করে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে গেলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।”
পক্ষী বিশেষজ্ঞ সম্রাট সরকার বলেন, “জলাশয় বুজে পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। যে কারণে বহু জায়গায় পানিফলের চাষ কমেছে। নদীও স্রোতহীন হয়ে পড়ছে। আর এই কারণেই স্থির জলাশয়ের পাখি জল ময়ূর জলঙ্গি নদীকে প্রজননের জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছে।’’ পাখি প্রেমী মানস ঘোষ বলেন, “তেহট্ট খেয়াঘাট, সরকারি কলেজের সামনে, ঝিনুকঘাটা এলাকায় জল ময়ূর দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। গত পনেরো বছর ধরে এই পাখি তেহট্ট এলাকায় দেখা যায়নি। তবে কদিন ধরে জলঙ্গি নদীতে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।’’ তবে একই সঙ্গে পাখিপ্রেমীদের আশঙ্কা, চোরাশিকারিদের কবলে পড়লে এই স্থান পরিবর্তন করতে পারে।
তেহট্ট মহকুমা বন দফতরের আধিকারিক সুদিন দাস বলেন, “যে সমস্ত এলাকায় জলময়ূর দেখা যাচ্ছে, সেখানে চোরাশিকার রুখতে নজরদারি চালানো হবে।’’