মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে চিকিৎসা না হওয়ায় লালগোলার পণ্ডিতপুরের রোগী আনারুল হককে হাসপাতাল থেকে বের করে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে পরিবার। নিজস্ব চিত্র
আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে গত শুক্রবার থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মবিরতি চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের। যার জেরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসা পরিষেবা ঠিক মতো পাচ্ছেন না বলে তাঁদের পরিজনেরা অভিযোগ তুলছেন। এই আবহে সোমবার বিনা চিকিৎসায় এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। ফের মঙ্গলবার বিনা চিকিৎসায় এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এ দিন সকালে সাপে কাটা ওই রোগীর মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে মৃতের নাম বিদ্যাসাগর সরকার (৩২)। তাঁর বাড়ি বহরমপুরের চরমহুলাতে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অমিত কুমার দাঁ বলেন, ‘‘আন্দোলনের প্রভাব তো পড়বেই। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
ঘটনায় ক্ষুব্ধ রোগীর পরিজনেরা। তাঁদের দাবি, কলকাতার আর জি করের ঘটনার নিন্দা করার পাশাপাশি দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। কিন্তু এ ভাবে বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। শুধু মৃত্যু নয়, সোমবার মতো মঙ্গলবারও হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা না পেয়ে বহু রোগী হয়রানির শিকার হয়েছেন। সকালের দিকে জুনিয়র ডাক্তাররা বহির্বিভাগে গিয়ে টিকিট দেওয়া বন্ধ করে দেন। ঘণ্টা খানেক পরে বহির্বিভাগের টিকিট দেওয়া শুরু হয়। তবে বহির্বিভাগেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক ছিলেন না। আজ, বুধবারও কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে।
তবে এ দিন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অমিত কুমার দাঁ বলেন, ‘‘পরিষেবা যাতে স্বাভাবিক থাকে তার চেষ্টা করছি।’’ তবে এ দিন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন, ‘‘আর জি করে দিদির সঙ্গে যে অপরাধ হয়েছে তার বিচার চাই। সব কলেজে দীর্ঘ মেয়াদী সুরক্ষা ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে নই। জরুরি এবং ইনডোর বিভাগে সিনিয়ার ডাক্তাররা পরিষেবা দিচ্ছেন। আমরা কেউ চাই না কেউ এখান থেকে বিনা চিকিৎসায় ফিরে যাক বা কারও কোনও ক্ষতি হোক।’’
বিদ্যাসাগরের স্ত্রী সুভদ্রা সরকার জানান, এ দিন ভোররাতে বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থা তাঁর স্বামীকে সাপে কামড় দেয়। তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে বহরমপুরের কর্ণসুবর্ণ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার সকালে তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর দাবি, ‘‘মঙ্গলবার সকালে বিদ্যাসাগরকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে তাঁকে শুধু একটি ইঞ্জেকশন দিয়ে ফেলে রাখা হয়েছিল। যার জেরে চিকিৎসা গাফিলতিতে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’’
এ দিন মাতৃমা বিভাগে স্ত্রীকে ভর্তি করতে এসে ফিরতে হয়েছে গোরাবাজারের শেখপাড়ার রাজীব শেখকে। রাজীব বলেন, ‘‘চিকিৎসক ধ্রুবজ্যোতি সাহাকে সোমবার আমার স্ত্রীকে দেখিয়েছিলাম। বিভিন্ন রকম সমস্যা হয়েছে। তাই তিনি আমার স্ত্রীকে মাতৃমাতে পাঠান। মঙ্গলবার সকালে মাতৃমা বিভাগে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলাম। চিকিৎসক দেখতে চাননি এবং বলেছে ভর্তি নেওয়া হবে না। তা হলে আমাদের মতো গরিব মানুষ কোথায় যাব? আমরা চাইছি সবাইকে ভর্তি নিয়ে চিকিৎসা করা হোক।’’
গত শুক্রবার থেকে মাতৃমাতে ভর্তি রয়েছেন লালগোলার তানিয়া খাতুন। এদিন তাঁর আত্মীয়া জানান, শুক্রবার থেকে মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় এক বার চিকিৎসক আসছেন। ঠিক মতো চিকিৎসা হচ্ছে না।