শোকার্ত পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র।
পাহাড়ের তুষারঝড়, গিরিখাদ সামলে সমতলে নেমে এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল বহরমপুরের তরুণ পর্যটক সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ের (৩৪)। দুর্গা ষষ্ঠীর দিন স্পিতি উপত্যকা ঘুরতে গিয়েছিলেন বহরমপুরের আট তরুণ তরুণী। কার্তিকের ঝকঝকে রোদের বুধবার সকালে সেখান থেকে বহরমপুরে সব্যসাচীর নিথর দেহ নিয়ে ফিরে এলেন বাকিরা। শোকের ছায়া ঢাকল বহরমপুরে।
ভোর ছ’টা নাগাদ যখন বিহারের অ্যাম্বুল্যান্স কান্দি পেরিয়ে বহরমপুরের রাস্তা ধরেছে রাতভর দম ধরে থাকা কান্নাটা আটকে রাখতে পারেননি প্রিয়াঙ্কা বন্দ্যোপাধ্যায়রা। গাড়ি যখন বহরমপুরের গির্জামোড়ে পৌঁছয়, সব্যসাচীর বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীরা তখন সেখানে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে। কাশিমবাজার কান্তনগরের বাসিন্দারা তখন উৎকন্ঠার প্রহর গুনছেন “পরোপকারী সব্য”কে শেষবারের মতো একবার দেখার আগ্রহে। কারও মুখে কোনও কথা নেই। ভোরের আলো ফোটার আগে থেকেই সেখানে নেমেছে যেন শ্মশানের নীরবতা।
মোটর বাইকে পাহাড়ে পর্যটনে সব্যসাচীর ছিল আলাদা রোমাঞ্চ, দাবি তার বন্ধুদের। ১২ হাজার ৫০০ ফুট উঁচু স্পিতি উপত্যকার সৌন্দর্য দর্শনে সুরক্ষার বলয়ে ঢেকেছিল নিজেকে ও তাঁর ভাতৃপ্রতিম বন্ধুদেরও। আর সেই সুরক্ষা কবচে ভর করে পেরিয়ে এসেছিল তুষারঝড়, পাহাড়ের গিরিখাদ। তবে পরিকল্পিত ভ্রমণ শেষ না করেই দুর্যোগে পড়ে ফিরতি পথ ধরেছিল জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের এই অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার। পাহাড়ের সতর্কতার ঘাটতি কি পড়েছিল চেনা সমতলে!
সুরক্ষিত হেলমেটের স্ট্র্যাপের লক খুলেই কি ৭০-৭৫ কিলোমিটার বেগে বহরমপুরের দিকে ধেয়ে আসছিল সব্যসাচীর বুলেট! সন্দেহ সহযাত্রীদের। বিহারের সাসারামে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে লেন ভেঙে যে সময় রাস্তায় একটি চারচাকা উল্টে যাচ্ছে সেই মুহূর্তে ওল্টানো গাড়িতে ধাক্কা লেগে মাথায় আঘাত লাগার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সব শেষ। তখনও বন্ধুরা মাইল খানেক দূরে। তখনও তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছেন না সব্যসাচী বেঁচে নেই। গতবছর ক্যান্সারে বাবা মারা গিয়েছেন। মা ছেলেকে শেষ দেখা দেখতে আসেননি লালবাগের শ্মশানেও। সেখানে তখন ভিড় সব্যসাচীর সহকর্মী আর মোহন মোড়ের বন্ধুদের, অফিস টাইম ধরে যাদের আড্ডা মারতে শিখিয়েছিল সে।