—ফাইল চিত্র।
ফের বিধিনিষেধ বাড়ল আরও ১৫ দিন। ফলে চরম সঙ্কটে পড়েছেন লকডাউনে কাজ হারানো বিড়ি শ্রমিকেরা। লকডাউনের ফলে প্রায় দু সপ্তাহ থেকে বন্ধ বিড়ি কারখানাগুলি। তা আরও বাড়ল দু সপ্তাহ। ফলে কাজ জুটছে না জঙ্গিপুর মহকুমার প্রায় ৭ লক্ষ বিড়ি শ্রমিকের।
বিড়ি মালিক সমিতি ও জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান পাট ও চা শিল্পের মত লকডাউনে ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে বিড়ি শিল্পেও কাজে ছাড় দেওয়ার দাবি রেখেছিলেন। কিন্তু তা মানেনি রাজ্য সরকার। এমনকি গত বৃহস্পতিবার ১৫ জুন পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানো হলেও কারখানা খোলার বাড়তি ছাড় জোটেনি বিড়িতে। যার ফলে কার্যত ৭ লক্ষ শ্রমিকের কাজ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই।
বামুহার অলকা মণ্ডল বলছেন, ‘‘স্বামী রাজমিস্ত্রি। ভিন রাজ্য থেকে কাজ বন্ধের জন্য ফিরে এসেছেন আগেই। সংসার চলে যাচ্ছিল সবাই মিলে দিনে হাজার দেড়েক বিড়ি বেঁধে। কিন্তু সে কাজও বন্ধ দশ দিন থেকে। স্বামীরও এখন কোনও কাজ নেই। ৮ জনের সংসার কী করে চলছে আমরাই জানি।"
শমসেরগঞ্জে ভাসাই পাইকরের রুমেদা বিবির স্বামী জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতেই পড়েছিল ১২দিন। করোনা ভেবে ভয়ে পরীক্ষা করাতে যাননি হাসপাতালে। বলছেন, ‘‘প্রতিদিন ৭/৮ শো করে বিড়ি বাঁধতাম সপ্তাহে ৪ দিন। চলছিল সংসারটা। বিড়ির কাজ বন্ধ হওয়ায় সোনার এক জোড়া কানের দুল ছিল। সেটাই সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। যদিন চলে। ফের লক ডাউন বেড়েছে দু সপ্তাহ। বিড়ি কারখানা না খুললে কঠিন সমস্যায় পড়তে হবে।’’
নিমতিতার সালাম শেখের বয়স ৬২ বছর। দুই ছেলে তাদের সংসার নিয়ে আলাদা থাকে। সালাম থাকেন স্ত্রী ও এক নাতনি (মেয়ের মেয়ে)কে নিয়ে। সালাম বলছেন, ‘‘বিড়ির কাজ আমি আর পারি না। বৌ আর নাতনিটা মিলে করে। তাও বন্ধ কারখানা। ফলে সে কাজও নেই। পাড়ার এক চায়ের দোকানদারের বিড়ি বাঁধছি দৈনিক ৬০০ করে, একশ দশ টাকা হাজারে। কি করব উপায় নেই। সেদ্ধ ভাতটা তো জুটবে।’’
গোটা বিড়ি মহল্লার চেহারাটাই এমনই। তবে কোনও কোনও কারখানা এখন মুন্সিদের মাধ্যমে কিছু কাজ করাচ্ছেন সুযোগ বুঝে কম মজুরিতে এই অভিযোগ তুলে সিটুর বিড়ি মজদুর ও প্যাকার্স সংগঠনের জেলা সভাপতি মহম্মদ আজাদ আলি বলেন, ‘‘লকডাউনের সুযোগ নিয়ে কিছু কিছু কারখানায় উৎপাদন কমিয়ে কাজ হচ্ছে গোপনে। তবে শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে অনেক কম। প্রতিবাদ করলে কাজ বন্ধ হয়ে যাবে ভয়ে যা মজুরি পাচ্ছে তাতেই শ্রমিকেরা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। সিটু দাবি করেছিল চা ও জুট শিল্পের মত ছাড় দেওয়া হোক বিড়ি শিল্পকেও। মানা হয়নি। অথচ বিড়ি কুটির শিল্প। শ্রমিকদের লকডাউন ভাঙার কোনও প্রশ্ন নেই। বাড়িতে বসেই বিড়ি বাঁধেন শ্রমিকেরা।’’
বিড়ি মালিক সমিতির সম্পাদক রাজকুমার জৈন বলেন, ‘‘কারখানা খুলতে না পারলে শ্রমিকেরা কাজ পাবেন কী করে? কিছু মুন্সির কাছে পাতা, মশলা দেওয়া ছিল। দু চারদিন সেই সূত্রে কিছু কাজ পেয়েছিল শ্রমিকেরা। পরবর্তীতে লকডাউন জারি থাকলে, বিড়ি শিল্প ছাড় না পেলে শ্রমিকদের সঙ্কট আরও বাড়বে। আমাদের তরফে কাজ করাতে কোনও আপত্তি নেই। এমনকী ৫০ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতেও রাজি ছিলাম আমরা। তাও মানা হয়নি।’’
জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন, ‘‘লকডাউন প্রথম পর্ব শেষ ৩১ মে। আশা ছিল তার পরে বিড়ি শিল্পের সুরাহা হবে। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে লিখিত ভাবে বিড়ি শিল্পের সমস্যার কথা জানিয়েছি। কাজ বন্ধের ফলে বিড়ি শ্রমিকদের সমস্যার কথাও মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। কিন্তু ছাড় দেওয়া হয়নি বিড়ি উৎপাদনে। আশা ছিল, বিধিনিষেধ বাড়লে বিড়ি শিল্প ছাড় পাবে।’’
কিন্তু সাংসদ এ কথা বললেও রাজ্য সরকার বৃহস্পতিবার ফের জানিয়ে দিয়েছেন বর্তমানের মতই বিধি নিষেধ বহাল থাকছে বিড়িতেও। অর্থাৎ রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত বদল না করলে আরও দু সপ্তাহ কাজ জোটার সম্ভাবনা নেই বিড়ি শ্রমিকদের।