প্রতীকী ছবি।
মরসুমি আনাজ চাষে সারের প্রয়োজন রয়েছে। সেই সঙ্গে বোরো ধানের মরসুমও আসন্ন। এই সময়ে জেলা জুড়ে রাসায়নিক সারের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ডিএপি, পটাশ, ইউরিয়ার মতো সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। যার জেরে মুর্শিদাবাদে দ্বিগুণ দামে সে সব সার বিক্রি হচ্ছে বলে কৃষকরা অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, খুচরো সার ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন সারের সরবরাহ কম। ফলে তাঁদেরও বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। তাই কৃষকদের কাছেও দাম বেশি নিতে বাধ্য নিচ্ছেন। আবার অনেক সার ব্যবসায়ী জানাচ্ছেন, তাঁদের কাছে ডিএপি, পটাশ, ইউরিয়া সার আসছে না।
জেলা পরিষদের কৃষি সেচ ও সমবায় দফতরের কর্মাধ্যক্ষ শাহনাজ বেগম বলছেন, ‘‘কেন্দ্র পর্যাপ্ত সার সরবরাহ করছে না। যার জেরে আমাদের জেলায় সারের সঙ্কট তৈরি হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সারের সঙ্কটের কারণে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম বেশি নিচ্ছেন বলে বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগও পাচ্ছি। ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
মুর্শিদাবাদের উপকৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) তাপস কুণ্ডু বলেন, ‘‘জেলা জুড়ে অসাধু সার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। কালোবাজারির অভিযোগ পেয়ে গত এক সপ্তাহ ১০ জন সারের ডিলারকে শোকজ করার পাশাপাশি তাদের লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হয়েছে। কালোবাজারি করতে দেওয়া যাবে না।’’
সারের সঙ্কটের কথা মানছেন সার ব্যবসায়ীদের সংগঠন মুর্শিদাবাদ জেলা ট্রেনিংপ্রাপ্ত ডেইজি ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের ডোমকলের সম্পাদক আনারুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার আনারুল বলেন, ‘‘মাস দুয়েক থেকে ডিএপি, পটাশ এবং ইউরিয়ার পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। যার জেরে সঙ্কট তৈরি হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমার কাছে ডিএপি, পটাশ এবং ইউরিয়া নেই। ফলে অন্য সার বিক্রি করতে হচ্ছে।’’
কৃষকদের অভিযোগ, ৫০ কেজি ডিএপি সারের দাম ১২০০ টাকা হওয়ার কথা। সেখানে ডিএপি সার বিক্রি হচ্ছে ১৬০০-১৮০০ টাকায়। ৫০ কেজি পটাশ সারের দাম ৮৫০ টাকা হওয়ার কথা, কিন্তু পটাশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকায়। ৫০ কেজি ইউরিয়ার দাম হওয়ার কথা ২৬৬ টাকা, কিন্তু তা সাড়ে চারশো থেকে পাঁচশো টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যার জেরে সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
ডোমকলের কৃষক সাবুল হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘‘সারের কালোবাজারি চললেও তা দেখার কেউ নেই। ফলে আমরা অসহায় অবস্থায় রয়েছি। আমরা চাই প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুক।’’
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদে প্রায় ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়। এক লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সর্ষে এবং ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়। এছাড়া কান্দি মহকুমা এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে আলু চাষ হয়। বোরো ধান চাষ আসন্ন। বাকি ফসল মাঠে চাষ শুরু হয়েছে।
যার জেরে এখন থেকে সারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর এখনই অসাধু সারের ব্যবসায়ীরা সারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির জেলার সাধারণ সম্পাদক তপন চন্দ্র বলেন, ‘‘সারের সঙ্কট ম্যানমেড। শাসকদল তৃণমূল সঙ্কট তৈরি করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা কথা প্রচার করছে।’’
তবে কৃষি দফতরের কর্তারা জানান, জেলায় পটাশ এবং ডিএপি সারের সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি আছে। তার বদলে মিনি ডিএপি এবং এনপিকের মতো সার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।