গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ট্যাব কেনার টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বেনিয়মের ঘটনায় বিড়ম্বনায় পড়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতর। ঘরে-বাইরে একঝাঁক অভিযোগের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। এই পরিস্থিতিতে যাতে আর পড়তে না-হয়, সেই বিষয়ে শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে নবান্ন। বলা হয়েছে, এ বার থেকে ট্যাব বা অন্য কোনও জনমুখী প্রকল্পে অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে যেন লক্ষ্মীর ভান্ডারকে ‘মডেল’ হিসাবে অনুসরণ করা হয়।
শাসকদলের নেতাদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প তৃণমূলকে নির্বাচনী রাজনীতিতে সাফল্য এনে দিয়েছে। সেই লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পকে ‘মডেল’ হিসেবে অনুসরণ করে শিক্ষা দফতরকে পরিষেবা দিতে বলা হয়েছে। ট্যাব সংক্রান্ত বিষয়ে সোমবার নবান্নে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ একটি বিশেষ বৈঠক করেছেন। নবান্ন সূত্রের খবর, ওই বৈঠকেই শিক্ষা দফতরের শীর্ষ আধিকারিকদের ওই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরামর্শের ছলে বলা হলেও নবান্নের শীর্ষ আধিকারিকেরা শিক্ষা দফতরের কর্তাদের লক্ষ্মীর ভান্ডার মডেল অনুসরণ করে পরবর্তী ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করার নির্দেশই দিয়েছেন।
নবান্ন সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে শিক্ষা দফতরকে বলা হয়েছে, আগামী বছর থেকে ট্যাবের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে যাতে একটিও বেনিয়মের ঘটনা না ঘটে, সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। কারণ, প্রত্যেক প্রকল্পের অর্থ দেওয়ার উপর রাজ্য সরকারের ‘ভাবমূর্তি’ নির্ভর করে। সেই প্রক্রিয়ায় ‘স্বচ্ছতা’ থাকা জরুরি। কোনও প্রকল্পের অর্থ খরচে বেনিয়ম পাওয়া গেলে তার দায় বহন করতে হয় রাজ্য সরকারকেই। তাই এ ক্ষেত্রে আরও সচেতন থাকতে হবে। সেই সূত্রেই লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পটিকে ‘মডেল’ হিসেবে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যে হেতু নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতর লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পটি পরিচালনা করে, তাই অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গেও আলোচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতরকে।
নবান্নের শীর্ষ আধিকারিকেরা জেনেছেন, ট্যাব কেনার টাকা দেওয়ার জন্য ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টালে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নাম নথিভুক্ত করতে হয় স্কুলগুলিকে। যে সব স্কুলে একাদশ-দ্বাদশে বৃত্তিমূলক কোর্স পড়ানো হয়, সেখানে ‘তরুণের স্বপ্ন’ নামে পৃথক একটি পোর্টালেও নাম নথিভুক্ত করা যায়। ছাত্রছাত্রীদের নাম, ব্যাঙ্কের নাম, শাখা, আইএফএসসি ও অ্যাকাউন্ট নম্বর পোর্টালে দিয়ে নথিভুক্তকরণ করতে হয়। সেখানে আধার কার্ড নম্বর দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। ছাত্রছাত্রীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আধার সংযুক্তিকরণ না থাকাতেই অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়েছে। লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে মহিলাদের আর্থিক অনুদান দেওয়ার প্রকল্পে আধার কার্ড নম্বর নথিভুক্ত করা হয়। ওই প্রকল্পে অনুদান প্রাপকের সংখ্যা এখন ২ কোটির বেশি হলেও ভুল অ্যাকাউন্টে টাকা যাওয়ার কোনও অভিযোগ নেই। তিন বছরের বেশি সময় ধরে এই প্রকল্পের অর্থ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনও বেনিয়মের অভিযোগ আসেনি। সে কারণেই লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পটিকে ‘মডেল’ হিসেবে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নবান্নের শীর্ষ আধিকারিকেরা।
স্কুল শিক্ষা দফতরের একটি সুত্রের বক্তব্য, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের আধার কার্ড নম্বর ভর্তির সময়ই নেওয়া হয়। ফলে স্কুলের কাছে আধার কার্ড সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য থাকে। তাই পোর্টালে আধার কার্ড নম্বর সংযুক্ত করার ব্যবস্থা চালু করা হলে তা কার্যকর করতে সমস্যা হবে না। এখন ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরের অ্যাকাউন্টের সঙ্গেও আধার কার্ড নম্বর যুক্ত থাকে। তেমন হলে আর্থিক বেনিয়ম আটকানো কঠিন হবে না।